28.9 C
Bangladesh
Wednesday, 26, March 2025

কাবুল দখলের আগেই স্বীকৃতির সন্ধানে তালেবান

যে প্রশ্নটি সবার মনে প্রথম আসছে, সেটি হলো যুক্তরাষ্ট্র কি সত্যিই আফগানিস্তান থেকে বরাবরের মতো চলে যাচ্ছে? দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, যুক্তরাষ্ট্র চলে যাওয়ার পর আসলে কী ঘটতে যাচ্ছে? তৃতীয় প্রশ্নটি সংঘাত–সংঘর্ষ বিষয়ের ছাত্রছাত্রীদের জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেটি হলো তালেবানের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের চুক্তিতে যাওয়া তালেবানের বৈধতা পাওয়ার ক্ষেত্রে কতটুকু ভূমিকা রাখতে পারে? যুদ্ধবিরতি এবং সংঘাত–পরবর্তী সম্ভাব্য অন্তর্ভুক্তিমূলক সরকারের বিষয়ে কার্যকর আলাপ ছাড়াই কেন আফগানিস্তানের কোন্দলরত পক্ষগুলোর আলাপ–আলোচনা স্থগিত হয়ে গেল?

এসব প্রশ্নের জবাব হিসেবে বহু কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক ইতিমধ্যে অনেক আলোচনা করেছেন। তঁাদের আলোচনা থেকে অন্তত এটি স্পষ্ট হয়েছে, তালেবানের উত্থানের কারণে আফগানিস্তানের ভেতরে ও বাইরের একটি অতি জটিল অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এ জটিল অবস্থা থেকে না আফগান সরকার, না তালেবান, না আন্তর্জাতিক শক্তিগুলো সহজে বেরিয়ে আসতে পারবে।

অতীতের গবেষণা থেকে মনে করা হয়, কোনো অঞ্চলের সংঘাতরত পক্ষগুলোর মধ্যে শান্তি আলোচনার জন্য বাইরের কোনো না কোনো নিরপেক্ষ শক্তিকে মধ্যস্থতা করতে হয়। এসব ক্ষেত্রে সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র সেই মধ্যস্থতাকারীদের মধ্যে নেতৃত্ব দিয়ে থাকে। কিন্তু আফগানিস্তানের ক্ষেত্রে সমস্যা হলো, এখানে যুক্তরাষ্ট্র নিরপেক্ষ কোনো শক্তি নয়, এখানে যুক্তরাষ্ট্র নিজেই একটি পক্ষ। কিন্তু এরপরও যুক্তরাষ্ট্র তালেবানের সঙ্গে শান্তি আলোচনা করেছে। তালেবানের সঙ্গে কূটনৈতিক আনুষ্ঠানিকতা বজায় রেখে তারা এক টেবিলে বৈঠক করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের এ কূটনীতিকে এখন পর্যন্ত ভুল ও ত্রুটিপূর্ণ বলা যেতে পারে। কারণ, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কূটনৈতিক পরিসরে আলোচনা করতে পারার সুযোগ তালেবানকে এখন আঞ্চলিক অন্য শক্তিগুলোর সঙ্গেও বৈঠক করার নৈতিক সাহস দিয়েছে। একই সঙ্গে রাশিয়া ও চীন তালেবানের প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলাপ করতে অস্বস্তিবোধ করছে না।

মার্কিন সেনারা আফগানিস্তানের মাটিতে পা রাখার পর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তারা ভুলে গিয়েছিল তারা আসলে কোন কারণে এসেছে। তারা কি আল–কায়েদাকে নিশ্চিহ্ন করতে এসেছে, নাকি তালেবান ও তাদের মিত্রদের? তারা কি নিগৃহীত সাধারণ আফগানদের গণতন্ত্র উপহার দিতে এসেছে, নাকি একটি আলাদা ধাঁচের জাতি গঠন করতে এসেছে?

তালেবান ইস্যুতে সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো ইতিমধ্যে কাদা–ছোড়াছুড়ি শুরু করে দিয়েছে। তালেবানের বৈধতার বিষয়ে কোনো পক্ষই স্পষ্ট অবস্থান জানাচ্ছে না। বিশেষ করে রাশিয়া ও চীন তালেবানের বিষয়ে স্পষ্ট ভাষ্য দিচ্ছে না। মনে রাখা দরকার, তালেবানের সঙ্গে লড়াই চালানোর বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তানের যেসব যুদ্ধবাজ নেতার ওপর নির্ভর করেছিল, তারা নিজেরাই একে অন্যকে বিশ্বাস করত না। মূলত এরাই আফগানিস্তানের মূল সমস্যা। এদের দুর্নীতি ও অন্তর্দ্বন্দ্বের কারণেই আফগানিস্তানে রাজনৈতিক শূন্যতার সৃষ্টি হয় এবং সেই শূন্যতা পূরণ করে তালেবানের জন্ম হয়।

এক লাখের বেশি মার্কিন সেনা আফগানিস্তানের মাটিতে পা রাখার পর অল্প কিছুদিনের মধ্যেই তারা ভুলে গিয়েছিল আফগানিস্তানে তারা আসলে কোন কারণে এসেছে। তারা কি আল–কায়েদাকে নিশ্চিহ্ন করতে এসেছে, নাকি তালেবান ও তাদের মিত্রদের? তারা কি নিগৃহীত সাধারণ আফগানদের গণতন্ত্র উপহার দিতে এসেছে, নাকি একটি আলাদা ধাঁচের জাতি গঠন করতে এসেছে?

আমরা দেখতে পেলাম, যুক্তরাষ্ট্র কিছুদিন পরপর তাদের উদ্দেশ্য পাল্টাতে লাগল। একবার তারা আল–কায়েদা বিনাশ করার কথা বলেছে, একবার বলেছে তালেবানকে উচ্ছেদ করার কথা, একবার বলেছে আফগানিস্তানে গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার কথা। সর্বশেষ তারা তালেবানের বৈধতা পাওয়ার পথকে অনেকটাই সুগম করে গেছে।

আপাতদৃশ্যে মনে হচ্ছে, কৌশলগত কারণে যুক্তরাষ্ট্র আফগানিস্তান থেকে সেনা সরিয়েছে এবং এতে গোটা অঞ্চলে একটি জটিল পরিস্থিতির সৃষ্টি হবে। সম্প্রতি পেন্টাগনের ফাঁস হওয়া একটি নথি থেকে জানা যাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র আফগান সরকারের সমর্থনে আগামী কয়েক সপ্তাহ তালেবানের ওপর বিমান হামলা অব্যাহত রাখবে বলে সিদ্ধান্ত নিয়েছে। তালেবানকে কোণঠাসা করে তাদের সরকারের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য করাই মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্র হয়তো ভুলে যাচ্ছে গত ২০ বছরে লাগাতার বিমান হামলা চালিয়ে যেখানে তালেবানকে নিশ্চিহ্ন করা যায়নি, সেখানে আবার বিমান হামলায় তারা পিছু হটবে এমনটা আশা করা বোকামি।

তালেবান এখন দাবি করছে, গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দোহায় যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে তাদের যে বৈঠক হয়েছে, সেখানে যুক্তরাষ্ট্র তালেবানের ওপর হামলা চালাবে না বলে কথা দিয়েছিল। এসব বিমান হামলায় সেই প্রতিশ্রুতি লঙ্ঘিত হবে। যুক্তরাষ্ট্র অবশ্য বলেছে, তালেবানের সঙ্গে এ ধরনের কোনো চুক্তি হয়নি। এ মুহূর্ত তালেবান কূটনৈতিক আলোচনা ও হামলা—দুটি পথই খোলা রেখে এগোতে চাইছে। তালেবান বিশ্বাস করে, বিদেশি সেনাদের ওপর হামলা বন্ধ করে আপাতত তারা কাবুল সরকারকে চাপে রাখলে বিদেশি মধ্যস্থতাকারীরা আলোচনায় আগ্রহী হবে এবং সে সূত্র ধরে তারা শাসনক্ষমতার বৈধতা দাবি করতে পারবে।

তালেবান মূলত বৈধতা আদায়ের ক্ষেত্রে একটা চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ে গেছে। তালেবানের শীর্ষ নেতারা যদি বাইরের দেশের কূটনীতিকদের প্রস্তাব মেনে শরিয়া আইনের স্থলে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধের শাসন প্রতিষ্ঠায় রাজি হন, তাহলে তালেবানের নিচের সারির সদস্যরা ক্ষুব্ধ হবে। আবার তালেবান নেতৃত্ব যদি বাইরের দেশের প্রস্তাব মেনে না নেয়, তাহলে তাদের বিদেশিদের বৈধতা দেওয়া কঠিন হবে। এ দুটি বিষয়ের ভারসাম্য রেখে কী উপায়ে বৈধতা পাওয়া যেতে পারে, সে বিষয়ে মরিয়া হয়ে উঠেছে তালেবান।

Related Articles

ঝিনাইদহে বিনামূল্যে ভ্যান গাড়ী বিতরণ

আসিফ ইকবাল, প্রতিবেদক: ঝিনাইদহে ফ্রিডম এ্যাডভান্স মনিটরিং একটিভিটিজ ফর সোসাইটি-ফেমাস সংস্থার উদ্যোগে ও বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের সহায়তায় কর্মসংস্থান ভিত্তিক স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ খাদ্য বিক্রয়ের জন্য...

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত

অনলাইন ডেস্ক : জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আজ (শনিবার) সকালে রাজধানীর গুলশানে জাতিসংঘের নতুন ভবনে এক...

মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে বাবা গ্রেপ্তার

অনলাইন ডেস্ক : মেহেরপুরের বিবাহিত মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৫ মার্চ) গ্রেপ্তারকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পুলিশ জানায়, ২৮ ফেব্রুয়ারি বাবার...

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -

Latest Articles

ঝিনাইদহে বিনামূল্যে ভ্যান গাড়ী বিতরণ

আসিফ ইকবাল, প্রতিবেদক: ঝিনাইদহে ফ্রিডম এ্যাডভান্স মনিটরিং একটিভিটিজ ফর সোসাইটি-ফেমাস সংস্থার উদ্যোগে ও বাংলাদেশ এনজিও ফাউন্ডেশনের সহায়তায় কর্মসংস্থান ভিত্তিক স্বাস্থ্যসম্মত নিরাপদ খাদ্য বিক্রয়ের জন্য...

রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি জাতিসংঘের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত

অনলাইন ডেস্ক : জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশকে জাতিসংঘের সমর্থন অব্যাহত রাখার কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। আজ (শনিবার) সকালে রাজধানীর গুলশানে জাতিসংঘের নতুন ভবনে এক...

মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে বাবা গ্রেপ্তার

অনলাইন ডেস্ক : মেহেরপুরের বিবাহিত মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগে বাবাকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। শনিবার (১৫ মার্চ) গ্রেপ্তারকে আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়। পুলিশ জানায়, ২৮ ফেব্রুয়ারি বাবার...

আজ ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিব, যাবেন রোহিঙ্গা শিবিরে

অনলাইন ডেস্ক : চার দিনের সফরে আজ বৃহস্পতিবার ঢাকায় আসছেন জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস। আগামীকাল শুক্রবার কক্সবাজারে রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবির পরিদর্শনের সময় তিনি এক লাখ রোহিঙ্গার...

ঝিনাইদহে রেলের দাবির আন্দোলনে পাশে আছি: অ্যাটর্নি জেনারেল

অনলাইন ডেস্ক: রাষ্ট্রের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, ঝিনাইদহে রেললাইনের দাবির আন্দোলন যদি বেগমান করতে পারেন, আমি আপনাদের সঙ্গে সতীর্থ থাকবো। মঙ্গলবার (১১...