28.9 C
Bangladesh
Monday, 23, June 2025
spot_img

দেশের সবচে বয়স্ক মানুষ শের আলী মিয়া ১১৩ বছর বয়সে ইন্তেকাল

প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ দেখা দেশের সবচে প্রবীন ও বয়স্ক মানুষ ঝিনাইদহ সদর উপজেলার মহারাজপুর ইউনিয়নের কুলবাড়িয়া গ্রামের শের আলী মিয়া হাওলাদার ইন্তেকাল করেছেন। রোববার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে তিনি বার্ধক্যজনিত কারণে ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ১১৩ বছর। এ খবর নিশ্চিত করেন মহারাজপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম। জাতীয় পরিচয়পত্র মোতাবেক শের আলী মিয়া ১৯০৮ সালের ১৭ জুলাই (জাতীয় পরিচয়পত্র নং ৪৪১১৯৫৮৩৯৪৮৭০) জন্ম গ্রহন করেন। গত ৯ জুলাই শের আলী মিয়ার ছেলে শহিদুল ইসলামের সঙ্গে কথা হলে তখন তিনি জানিয়েছিলেন জানান, তার পিতা আগের চেয়ে কম চলাফেরা করতে পারেন। হুইল চেয়ারে বসে সব কিছু করেন। খাওয়া দাওয়া আগের মতোই আছে। নিজে ওজু করে ৫ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেন। জীবনে কোন অসুখ বিসুখ তাকে স্পর্শ করেনি। শেষ জীবনে এসেও তিনি এক প্রাণবন্ত মানুষ। জীবদ্দশায় শেল আলী মিয়া জানিয়েছিলেন, ১৯১৪ সালে যখন প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু হয় তখন তিনি সবেমাত্র কৈশর থেকে যৌবনে পা রেখেছেন। শরিয়তপুর জেলার নড়িয়া উপজেলার রাহাপাড়া গ্রামে তারা বসবাস করতেন। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের কারণে ভারত বর্ষ থেকে ব্রিটিশরা যখন সৈন্য সংগ্রহ শুরু করে, তখন শের আলী ও তার বড় মামা আমজাদ আলী সরদার যুদ্ধে যাওয়ার জন্য ব্রিটিশ সৈন্যদলে নাম লেখান। সে সময় তারা তাকে একটি সার্টিফিকেটও দেন, যেটি তার ছেলেরা হারিয়ে ফেলেছেন। যুদ্ধের দামামা বেজে উঠলে তার মা-বাবাসহ বাড়ির সবাই কান্নাকাটি শুরু করেন। যুদ্ধে যাওয়া বাধ্যতামুলক করে ব্রিটিশ নেতৃত্বাধীন জোট ফরমান জারী করলে শের আলী মিয়া ও তার বড় মামা তখন যুদ্ধে না গিয়ে পালিয়ে যান ভারতের বনগাঁর কাঠালিয়া গ্রামে। পরবর্তীতে সপরিবারে ভারতে বসবাস শুরু করেন। ভারত থেকে তিনি প্রায় শরীয়তপুরের রাহাপাড়া গ্রামে আসা যাওয়া করতেন। আনুমানিক ২০/২২ বছর বয়সে তিনি পাশ্ববর্তী নলতা গ্রামের করম আলী খুনকারের মেয়ে আছিয়া খাতুনের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। প্রথম পক্ষের এক কন্যা সন্তান হওয়ার পর স্ত্রীর আর কোন সন্তান হবে না জানতে পেরে তিনি নলতা গ্রামের তমিজ উদ্দীন মাঝির কন্যা রুপভান বেগমকে দ্বিতীয় স্ত্রী হিসেবে ঘরে তোলেন। দ্বিতীয় স্ত্রীর পক্ষে ৫ ছেলে ও ১ মেয়ে। ১৯৬৮ সালে ছোট স্ত্রী রুপভান ও ১৯৯৯ সালে বড় স্ত্রী আছিয়া খাতুন ইন্তেকাল করেন। শের আলী মিয়ার ভাষ্যমতে, ১৯৪৬ সালে ভারতে পাঞ্জাবে হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা শুরু হলে সম্পত্তি বিনিময় করে তিনি ৫ ভাই ও পিতা মাতার সাথে চলে আসেন যশোরের চৌগাছা উপজেলার ভাদড়া গ্রামে। ভাদড়া গ্রামে এসে দেখেন মুসলিমদের নামাজ পড়ার কোন মসজিদ নেই। ১০/১৫ ঘর মানুষের বেশির ভাগ মুসলিম হিন্দু রীতি অনুসরণ করেন। এ সব দেখে তিনি নিজের ইমান আকিদা রক্ষা করতে চলে আসেন ঝিনাইদহের কুলবাড়িয়া গ্রামে। এলাকার চেয়ারম্যান খুরশিদ আলম রোববার বিকালে জানান, পারিবারিক সিদ্ধান্ত মোতাবেক দেশের সবচে প্রবীনতম ব্যক্তি শের আলীর জানাযা ও দাফন সম্পন্ন হবে। তিনি দুঃখ করে বলেন, গিনেজ বুক অব ওয়ার্ড রেকর্ডস এ নাম ওঠানো আমাদের দাবী ছিল। কিন্তু সেটা আর হলো না।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles