মদকাণ্ডে অভিযুক্ত বসুন্ধরা কিংসের পাঁচ ফুটবলারের বিষয়ে তদন্ত সম্পন্ন করে রিপোর্ট জমা দেওয়া হয়েছে। বুধবার রিপোর্ট হাতে পেয়ে রাতেই পড়ে গতকালই শাস্তি দিয়েছেন বসুন্ধরা কিংসের সভাপতি ইমরুল হাসান।
শেখ মোরসালিনকে ১ লক্ষ, রিমন হোসেন ৩ লক্ষ টাকা জরিমানা। মদ আনতে উত্সাহ দেওয়ায় তপু বর্মনকে ৩১শে ডিসেম্বর ২০২৩ পর্যন্ত ৩ মাস নিষিদ্ধ এবং ১ লক্ষ টাকা জরিমানা করা হয়। গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকোকে আরো বেশি শাস্তি দেওয়া হয়েছে। জিকো আগামী ২০২৪ সালের ৩১ মার্চ পর্যন্ত, ৬ মাস নিষিদ্ধ। তৌহিদুল আলম সবুজ ২০২৩-২০২৪ মৌসুমের জন্য নিষিদ্ধ। সেই সঙ্গে দলের কর্মকর্তাদেরকে আরো অধিকতর সতর্কতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
গত ১৯ সেপ্টেম্বর মালদ্বীপের মালেতে অনুষ্ঠিত এএফসি কাপ ফুটবলের গ্রুপ পর্বে স্থানীয় মাজিয়া স্পোর্টসের বিপক্ষে প্রথম ম্যাচ খেলে ৩-১ গোলে হেরে ফেরার পথে ঢাকায় বিমনবন্দরে ৬৪ বোতল মদ নিয়ে ধরা পড়েন সাত জন। এর মধ্যে পাঁচ জন্য ফুটবলার এবং দুই জন ক্লাবের বলবয়। কাস্টম কর্তৃপক্ষের কাছে যথেষ্ট প্রমাণ পাওয়ার পরও কিংস কর্তৃপক্ষ বিষয়টি নিখুঁত তদন্তের জন্য পুলিশের এক অবসর প্রাপ্ত কর্মকর্তাকে দায়িত্ব দেয়। অভিযুক্ত তপু বর্মন, গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো, শেখ মোরসালিন, তৌহিদুল আলম সবুজ এবং রিমন হোসেন, বলবয় আলম এবং কাইউম রয়েছেন। সবাইকে ক্লাব হতে বের করে দেওয়া হয়েছে।
ইমরুল হাসান মনে করছেন, জাতীয় দলের খেলোয়াড় আছে বলে তারাও একটু নজর রাখছেন। বিষয়টি অধিকতর তদন্তের জন্য ৩০ দিন সময় বেঁধে দিয়ে পুলিশের অবসরপ্রাপ্ত এসপি এহসান উদ্দিন চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। তিনি মাত্র ১০ দিনেই পূর্ণাঙ্গ রিপোর্ট জমা দিয়েছেন বুধবার। পুলিশের এই সাবেক কর্মকর্তা চাকরিকালীন গুরুত্বপূর্ণ মামলার বিষয়ে তদন্ত কাজের দায়িত্ব পালন করেন।
নারায়ণগঞ্জে বহুল আলোচিত সাত খুনের মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ছিলেন, চাষাড়া বোমা হামলা তদন্ত করেছেন তিনি। বিডিআর হত্যার ঘটনা উদ্ঘাটনে আইডেন্টিফিকেশনের দায়িত্বে থাকা ছয় জনের মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ একজন ছিলেন এহসান উদ্দিন চৌধুরী। ডিজিস্ট আইডেন্টিফিকেশন (মৃত ব্যক্তিকে শনাক্তকরণ) কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করে প্রেসিডেন্ট অ্যাওয়ার্ড পেয়েছেন।
এত দ্রুত কীভাবে রিপোর্ট দেওয়া সম্ভব হয়েছে? তদন্ত কর্মকর্তা এহসান উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘এখানে সবকিছু ডকুমেন্টসের ওপর নির্ভর করে। যা কাজ করেছি সবই কাগজে কলমে। তাই সময় লাগেনি।’ তিনি বলেন, ‘আমি জন্মগতভাবে তদন্ত করে আসছি। তাই খুব একটা কঠিন মনে হয়নি। ওরা (খেলোয়াড়রা) ওদের সাফাই গেয়েছে। একজন একজন করে কথা বলেছি।’
কিংসের অফিসে পৃথক কক্ষে তদন্তের কাজ করেছেন এহসান উদ্দিন চৌধুরী। সবাই লিখিত দিয়েছেন। কার কোথায় ভুল হয়েছে। কে কী করেছে তা লিখিত দিলেও তদন্ত কর্মকর্তার কাছে অভিযুক্ত ফুটবলাররা ক্ষমা প্রার্থনা করেছেন। এহসান উদ্দিন চৌধুরী বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে জানতে হবে এত সুযোগ-সুবিধা পেয়েও কেন তারা এটা করলেন। আমি ওপেন করে দিয়েছিলাম। ওরা ওদের মনের কথা বলতে পেরেছে। ওরা লিখিত দিয়েছে, মাফ চেয়েছে, কেউ ভুল করেছে। কেউ বন্ধুর জন্য আনার কথা বলেছেন।’
ক্লাব কর্তৃপক্ষ বিষয়টি খুব সহজেই গ্রহণ করছে না। কারণ বিমনাবন্দরে থেকে মদ কেনা হলে রিসিপট দেখাতে পারত। সাত জন মদ কিনলেও রিসিপট দেখিয়েছেন মাত্র এক জন। বাকি মদ কোথা থেকে এলো। কিংসের নীতিনির্ধারকরা মনে করছেন, বাইরে থেকে মদ নিয়ে বিমানবন্দরে প্রবেশ করলে নিরপত্তা স্ক্যানিংয়ে ধরা পড়বেই। ডিউটি ফ্রি শপ থেকে কিনলে বোর্ডিংকার্ড দেখিয়ে কিনতে হবে। পাসপোর্ট নম্বর লিখে পণ্য কেনার রশিদ দেবে। সেটা কোথায়। সন্দেহ করা হচ্ছে কোনো চক্র এই ফুটবলারদের সহায়তা করেছে কি না। তা না হলে এত মদ নিয়ে বিনা বাধায় কীভাবে বিমানে উঠল। কিংসের কর্মকর্তা জানিয়েছেন, ২০ সেপ্টেম্বর রাতে ঢাকায় বিমানবন্দরে চারটি টিম কাজ করছিল। কোনো ম্যাসেজ ছাড়া এটা হবার কথা না। এদের মধ্যে এপিবিএন পুলিশের কাছে মদসহ সবার প্রথম ধরা পড়েন তপু বর্মন।
ইমরুল হাসান বললেন, ‘আমরা খেলায় হেরেছি। খেলোয়াড়দের মধ্যে অনুশোচনা হবার কথা। এত পরিমাণ মদ কেনার মানে উত্সব করা। আমাদের কাছে মনে হয়েছে দল হারের পর উত্সব করতে পারেন না।’