28.9 C
Bangladesh
Thursday, 10, July 2025
spot_img

ঝিনাইদহে প্রতারণার মাধ্যমে ভাইয়ের নাম পরিবর্তন করে বোনের নাম সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দুর্ণীতি ফাঁস

ওমর আলী সোহাগ, ঝিনাইদহ:

ঝিনাইদহ জেলা রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের মহাফেজখানা থেকে দলিল বের করে কাটাছেড়া করে ভাইয়ের নামের জায়গায় বসানো হয়েছে বোনের নাম। এতেই বেহাত হয়েছে বড়ভাই অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাদাদ কামালের নামে বাবার দেওয়া অর্ধশতকোটি টাকা মূল্যের সম্পত্তি। শৈলকুপা উপজেলার হাটফাজিলপুর বাজারে অবস্থিত এই জমির বাজার মূল্য ৫০ কোটির টাকার ঊর্ধে¦ এমন দাবি প্রতারণার শিকার অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী সাদাদ কামালের।

ঝিনাইদহ সাব রেজিস্ট্রি অফিসের নকল নবিশ বাবুল আক্তার ও দলিল লেখক মোঃ আল মামুন(লাইসেন্স নং-১৭৮) বিপুল অংকের টাকার মাধ্যমে ছোটভাই প্রতারক ওয়াসিফ কামালকে এই জমি আত্মসাতে সহযোগিতা করেছেন। লিখিত অভিযোগের ভিত্তিতে গত ৩ জুন ঝিনাইদহ সদর সাব রেজিস্ট্রার ও মহাফেজখানার দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোস্তাক হোসেন সাব-রেজিস্ট্রি অফিস সংশ্লিষ্ট ২ জনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দিয়েছেন। আর এতেই সামনে এসেছে একটি বিরাট প্রতারণা ও দুর্নীতির ফিরিস্তি। তথ্য ফাঁস হলে রেকর্ডরুমে সংরক্ষিত দলিল নিয়ে শঙ্কা করছেন জেলার সচেতন মহল। তাদের দাবি ঘষামাজা করে আরও জমির মালিকানা পরিবর্তন করে থাকতে পারেন রেকর্ড রুম সংশ্লিষ্টরা। এদিকে এই দুর্নীতি ফাঁস হলে নড়ে চড়ে বসেছে সাব-রেজিস্ট্রি অফিস। ইতোমধ্যে অভিযুক্ত দুইজনকে অব্যাহতি প্রদান করা হয়েছে এবং জেলার মহেশপুর সাব-রেজিস্ট্রার মোঃ আনোয়ার হোসেনকে প্রধান করে অধিকতর তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

জানাগেছে, ২০১৫ সালের ১৭ নভেম্বর শৈলকুপার হাটফাজিলপুর বাজারের বাসিন্দা এ্যাড: আহমেদ মাসুদ কামাল তার দুই ছেলে সাদাদ কামাল ও ওয়াসিফ কামালের নামে বাজারে অবস্থিত ৮৫ শতক জমি লিখে দেন। যার দলিল নং-৫৪৪৫। এই জমির ওপর রয়েছে বিপণীবিতান। বিপণীবিতান থেকে বর্তমানে প্রতিমাসে ২ লাখ ১৬ হাজার টাকা ভাড়া আসছে। ২০২৪ সালের ২৮ আগস্ট মৃত্যুবরণ করেন এ্যাড: মাসুদ কামাল। বাবার মৃত্যুর পরে বড়ভাই সাদাদ কামালের নামে অংশ আত্মসাৎ করতে ছক কষতে থাকেন ছোটভাই ওয়াসিফ কামাল। ওয়াসিফ কামাল পেশায় আইনজীবী। তিনি ঝিনাইদহ জেলা জজকোর্টে আইনজীবী হিসাবে কর্মরত। ওয়াসিফ কামাল ঝিনাইদহ সাবরেজিস্ট্রি অফিসের নকল নবিশ বাবুল আক্তার ও দলিল লেখক মোঃ আল মামুনকে টাকা দিয়ে রেকর্ড রুম থেকে দলিল ও বালাম বই বের করে ভাই সাদাদ কামালের নাম মুছে দিয়ে সেখানে বোন দিশা কামালের নাম লেখেন। ইনডেক্সেও নাম পরিবর্তন করে ফেলেন। বালাম বইয়ে ঘষামাজা অন্য কর্মকর্তার নজরে আসলে ধরা পড়েন নকল নবিশ বাবুল আক্তার। তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করলে বেরিয়ে আসে টাকার বিনিময়ে তাদের দুর্নীতির তথ্য। প্রবাসী সাদাদ কামাল ঘটনার সঠিক তদন্ত চেয়ে লিখিত অভিযোগ দিলে মহাফেজ খানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সাব রেজিস্ট্রার মোস্তাক হোসেন নকল নবিশ বাবুল আক্তার ও দলিল লেখক মোঃ আল মামুনের বিরুদ্ধে কেন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবেনা জানতে চেয়ে নোটিশ দিয়েছেন।
সাবরেজিস্ট্রি অফিস সূত্রে জানাগেছে, টেম্পারিং করে নাম পরিবর্তনের পর একটি নকলও নিয়েছেন ওয়াসিফ কামাল গং। যেটা প্রস্তুত করে দিয়েছেন নকল নবিশ বাবুল আক্তার।
প্রতরণার শিকার প্রবাসী সাদাদ কামাল বলেন, বাবা প্রয়াত আইনজীবী এ্যাড: আহমেদ মাসুদ কামাল ২০১৫ সালের ১৭ নভেম্বর আমাদের দুই ভাইয়ের নামে হাটফাজিলপুর বাজারে থাকা ৮৫ শতক জমি লিখে দেন। এই জমির উপরে মার্কেট রয়েছে। যেখান থেকে প্রতিমাসে দুই লাখ ১৬ হাজার টাকা ভাড়া ওঠে। বাবা মারা যাওয়ার পরে ছোটভাই ওয়াসিফ কামাল আমার নামের জমি আত্মসাৎ করার উদ্দেশ্যে সাবরেজিস্ট্রি অফিস থেকে দুর্নীতির মাধ্যমে দলিল ও বালাম বই টেম্পারিং করে আমার নামের জায়াগায় বোনের নাম বসিয়েছে। আমাদের অন্য জমি ভাগাভাগি করতে গেলে ছোটভাই ওয়াসিফ কামাল বলে এই জমি বাবা বোন ও ওয়াসিফ কামালের নামে লিখে দিয়ে গেছে। তখন আমি বিভিন্ন মাধ্যমে খোঁজ খবর নিয়ে তাদের প্রতারণার কথা জানতে পারি। আমি লিখিত অভিযোগ দিয়েছি এর সঠিক বিচার চাই। তিনি বলেন, আমার বোনের নামে এই জমি পুরোপুরিভাবে করে ফেলতে পারলে পরে আবার বোনের কাছ থেকে তার নামে করে নেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল ছোটভাই ওয়াসিফ কামাল। তিনি বলেন, এসমস্ত প্রতারণা নিয়ে ছোটভাইয়ের স্ত্রী প্রতিবাদ করলে তাকেও ডিভোর্স দিয়েছে ওয়াসিফ কামাল।
এ বিষয়ে দিশা কামাল বলেন, তিনি এই সব বিষয়ে কিছুই জানেন না। বড় ভাই অভিযোগ করার পর বিষয়টি বাবার বাড়ি বেড়াতে গিয়ে জানতে পেরেছেন। দলিল ঘষামাজা হয়েছে কি না, এটা তাঁর জানা নেই।

এ্যাড: ওয়াসিফ কামালকে ফোন করলে তিনি বলেন, তার জমি নিয়ে কোন সমস্যা নেই। ঘষামাজা করে বোনের নাম বসানোর বিষয়ে তিনি অস্বীকার করেন।
এদিকে নকল নবিশ বাবুল আক্তারের একটি ভিডিও রয়েছে প্রতিবেদকের হাতে যেখানে তার স্বীকারোক্তি রয়েছে। ভিডিওতে তিনি বলেছেন, ৩০ হাজার টাকার বিনিময়ে তিনি এই কাজ করেছেন। দলিল লেখক আল মামুন তাকে এই কাজ করতে বলেছেন।

সদর মহাফেজখানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও সাবরেজিস্ট্রার মোস্তাক হোসেন বলেন, প্রাথমিকভাবে প্রমাণ পাওয়ায় এই কাজের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে দলিল লেখক মো. আল মামুন ও নকলনবিশ মো. বাবুল আক্তারকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। তাদেরকে সাসমেন্ট করা হয়েছে। অধিকতর তদন্তের জন্য মহেশপুর সাবরেজিস্ট্রারকে প্রধান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। তদন্তে দোষী হলে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির আওতায় নিয়ে আসা হবে বলেও তিনি যোগ করেন। তিনি বলেন, রেকর্ড রুম থেকে দলিল বের করে টেম্পারিং করে নাম পরিবর্তন করা আমাদের জন্য ব্যাপক মানহানিকর। আমানতের খিয়ানত করা। এটা আমাদের জন্য খুবই দুঃখজনক। এটা কোনভাবেই প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles