28.9 C
Bangladesh
Tuesday, 24, June 2025
spot_img

আমাদের সমাজের শিশু ও শিশুর শিক্ষা

এই যান্ত্রিক শহরে প্রাণ খুলে শ্বাস নেবার জন্য কয়েকদিন আগে পদ্মা নদীর তীরে গিয়েছিলাম কুষ্টিয়ায়। নদী তীরকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা পার্কের ছাউনির নিচে বসে থাকা অবস্থায় হঠাৎ চোখের সামনে একগুচ্ছ ফুল চলে আসলো। কিছুটা বিস্মিত হয়ে দেখলাম আট বা নয় বছর বয়সী এক শিশুর হাতে অনেকগুলো ফুল এবং সে আমাকে উদ্দেশ্য করে বলছে একটি ফুল নেন প্লিজ, খিদা লাগসে, ভাত খামু। তাকে কিছু টাকা দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, তুমি পড়ালেখা করো না? সে বলল ঠিকমতো তো খাইতেই পাইনা, আমরা গরিব মানুষ। ফুল বিক্রি করেই দিন কাটে আমাদের। তার মতো এরকম শিশু আমাদের সমাজে আরো অনেক রয়েছে যারা তাদের মৌলিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। ৮ম শ্রেণীতে পড়া আমার ছোট বোন যখন বলে আমি বড় হয়ে ডাক্তার হতে চাই তখন তার সমবয়সী আরেকজন শিশু দু’মুঠো ভাতের জন্য রাস্তায় ফুল বিক্রিতে ব্যস্ত, পড়ালেখা তাদের কাছে শুধুই বিলাসিতা। সেই ফুল বিক্রি করা শিশুটিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, “তোমার স্বপ্ন কি?” উত্তরে যা বলেছিল তা আমি হয়তো কোনদিন ভুলবো না।তার স্বপ্ন হলো প্রতিদিন পেট ভরে ভাত খেতে চাই।কি অদ্ভুত! তার সমবয়সী ছেলে মেয়েরা ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হওয়ার স্বপ্ন দেখে আপন স্বপ্ন পূরণের পথে হাঁটছে কিন্তু এসব শিশুদের স্বপ্ন তাদের দারিদ্রতার বেড়াজালে বন্দী। তারা ভাবতেই পারে না যে সেও ডাক্তার, ইঞ্জিনিয়ার হতে পারে। দেশের সেবা করতে পারে। ভাববেই বা কিভাবে? কেউ তো তাদের সপ্ন দেখাইনি। শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে পারলে তার মত শিশুরা পড়ালেখা করে দেশের উন্নয়নে অগ্রণী ভূমিকা রাখতে পারবে। সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রায় দেখা যায় পথ শিশুদের খাবার বিতরণ করতে। এই এক বেলা খাবার দিয়ে কি তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের দার উন্মোচন করা সম্ভব হবে? কখনোই না। প্রথমে তাদের মৌলিক অধিকার গুলো নিশ্চিত করতে হবে। আমাদের দেশের শিক্ষিত সমাজ কি দেখতে পায় না এসব অবহেলিত শিশুদের? সমাজসেবা অধিদপ্তরের প্রতিষ্ঠান ছোটমনি নিবাস সহ শিশুদের নিয়ে কাজ করে এমন অনেক প্রতিষ্ঠান থাকা সত্ত্বেও কেন আজ পথ শিশুদের হাতে বই খাতা থাকার পরিবর্তে থাকে বিক্রি করার জন্য ফুল! আমরা সবাই চাইলে সকল শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করে তাদের দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত করতে পারবো। বঙ্গবন্ধু সোনার বাংলায় কোনো শিশু অবহেলিত, অধিকার বঞ্চিত থাকবে এটা কোনভাবেই কাম্য নয়। শিশু অধিকার নিশ্চিতে সরকার অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে কিন্তু সঠিক সমন্বয় এবং দায়িত্বের প্রতি আন্তরিকতা না থাকলে সেসব পথ শিশুদের সোনালী স্বপ্নের বীজ হয়তো কোনদিনই অঙ্কুরোদগমিত হওয়ার সুযোগ পাবে না। অধিকার বঞ্চিত শিশুরা অল্প বয়সে শ্রমে যুক্ত হওয়া এবং নৈতিক শিক্ষা না পাওয়ায় পরবর্তীতে উগ্রবাদী হয়ে যাচ্ছে। পত্রিকার পাতা উল্টালেই এখন চোখে পড়ে কিশোর গাংয়ের অপকর্ম। শিশু অধিকার নিশ্চিত করতে না পারায় এই কিশোর গ্যাং গড়ে ওঠার অন্যতম কারণ। শুধু পদক্ষেপ গ্রহণ করে নীতিমালা প্রণয়ন করে বসে থাকলে হবে না, প্রতিটি পথ শিশুকে নিজের সন্তান, ছোট ভাইয়ের দৃষ্টিতে দেখে তাদের মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিতে হবে। শিশু অধিকার নিশ্চিতকরণে পরিবারের ভূমিকাও বেশ গুরুত্বপূর্ণ। পরিবারগুলোকে বোঝাতে হবে তাদের সন্তান স্কুলে গেলে, শিক্ষিত হলে তা সকলের জন্যই কল্যাণকর। ড. আতিউর রহমান স্যার বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন অন্যতম সফল গভর্নর। তিনিও কিন্তু ছোটবেলায় শিশু অধিকার থেকে বঞ্চিত ছিলেন। তবে তার অদম্য ইচ্ছাশক্তি আর কঠোর পরিশ্রমের ফলশ্র“তিতে তিনি আজ একজন দেশ বরণ্য ব্যাক্তিতে পরিণত হয়েছেন। তার মতো সুপ্ত প্রতিভার অধিকারী অনেক শিশুই আজ রাস্তায় ফুল বিক্রি কিংবা

শিশুশ্রমে যুক্ত।

সরকারের যথাযথ উদ্যোগ এবং সকলের সহযোগিতা পেলে এই পথশিশুরাই আগামীর স্মার্ট বাংলাদেশের নেতৃত্ব দিতে পারবে। অনেকেই এসব শিশুদের খারাপ দৃষ্টিতে দেখেন,যারা এদের খারাপ দৃষ্টিতে দেখেন তাদের উদ্দেশ্যে বলতে চাই, লজ্জা তো আপনাদের হওয়া উচিত যারা শিক্ষিত, বৃত্তশালী হয়েও এসব শিশুদের হাতে বই খাতা আর মুখে দু—মুঠো ভাত তুলে দিতে পারেন নি। শিক্ষার উদ্দেশ্য কি শুধুই অর্থ উপার্জন? কখনোই না। আপনার অর্জিত শিক্ষা যদি আপনাকে সামাজিক, মানবিক, নৈতিকতা সম্পন্ন ব্যাক্তি রূপে গড়ে তুলতে না পারে তাহলে সে শিক্ষা অর্থহীন। আমাদের দেশে এমন অনেক শিল্পপতি রয়েছেন যারা একটু চেষ্টা করলে হাজারো অধিকার বঞ্চিত শিশুর ভবিষ্যতের কালো মেঘ দূর করে সোনালী সূর্য উদিত হওয়ার সুযোগ করে দিতে পারবেন। সে সব বিত্তশালী মানুষের প্রতি বিনীত আহ্বান আপনার আশেপাশের শিশুদের অধিকার নিশ্চিত করার ব্যাপারে সচেতন হউন। আমরা সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সচেতন হলে আমাদের দেশের সকল শিশুর অধিকার নিশ্চিত করা সম্ভব হবে ইন শা আল­াহ। আমরা এমন এক বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখি যখন শিশু অধিকার রক্ষায় করণীয় কি তা আমাদের সভা সেমিনারের আলোচ্য বিষয় হবে না, বরং শিশু অধিকার শতভাগ নিশ্চিতকরণে আমাদের সফলতার গল্প বিশ্বব্যাপী প্রশংসিত হবে।

লেখক: দর্শন বিভাগ, অনার্স ৪র্থ বর্ষ

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles