নাম অনিক হোসেন বাবু। বয়স ৩০ বছর ছুঁইছঁই। ২০১৬ সালে ফরিদপুর রাজেন্দ্র সরকারি কলেজ থেকে মাস্টার্স পাশ করে অনিক। পরিবারে বাবা-মা সহ নয় ভাইবোনের মধ্যে অনিকই একমাত্র শিক্ষার আলো ছড়িয়েছিল। কিন্তু মহামারি করোনায় আক্রান্ত হয়ে গত ০৩ আগস্ট মৃত্যু বরণ করেন কবিরাজের ঝাড়ফুঁক ও অপচিকিৎসার কারণে। কবিরাজের অন্ধ বিশ্বাস ভেঙেছে হাস্যউজ্জ্বল পরিবারের আর্তনাদ। অনিক ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার উমেদপুর ইউনিয়নের পাঁচপাকিয়া গ্রামের আব্দুর রাজ্জাক মোল্লার ছোট ছেলে। অনিকের মেজো ভাই দক্ষিন করিয়া প্রবাসী মিজানুর রহমান বলেন, আমি আমার বুকের ভেতর চেপে রাখা ক্ষোভ আর রক্তক্ষরণ আর আটকে রাখতে পারছিনা। অনিক আমার আদরের কলিজার টুকরা ছোটভাই। আমরা ৯ ভাই বোন। চারবোন পাঁচ ভাই। আমরা লেখাপড়ার গন্ডি পার হতে না পারলেও একমাত্র পরিবারের মধ্যে আলো ছড়িয়ে ছিলো। অনিককে মানুষের মতো মানুষ করে গড়ে তুলেছিলাম। সংসারের নানা টানপোড়ার মাঝেও আমি ওকে লেখাপড়া শিখিয়েছি। সবেমাত্র মাস্টার্স পাশ করেছে। স্বপ্ন ছিলো বিসিএস ক্যাডার হবে প্রস্তুতিও চলছিল ভালো একটা চাকরি করে আমাদের বংশের মুখ উজ্জ্বল করবে। কত স্বপ্ন দেখিয়েছিল আমাকে আর বিদেশ করতে হবে না। এখন আর অনিক কখনোই আমাকে স্বপ্ন দেখাবে না। কখনই আর বলবেনা বিদেশ তো অনেকদিন করলেন বাড়ি এসে সংসার করেন। আমার চাকরিটা হলেই চিন্তা শেষ। বুকটা ফেটে যায় আত্মচিৎকারে আমার মনে হয় কেউ এসে আমাকে বলবে ছোট ভাইয়ের মৃত্যুটা সত্য নয় দুঃস্বপ্ন ছিল। কিন্তু ভন্ড প্রতারক কবিরাজের অপচিকিৎসার শিকার হয়ে আমার ভাইকে অকালেই চলে যেতে হলো। নিভে গেল প্রদীপ! ঝরে গেল স্বপ্ন। এর জন্য আমার পরিবারের লোকের অসচেতনতাকেও দায়ি করেন।তিনি আরো জানান, অবাক বিষ্ময়কর ব্যাপার ঝিনাইদহের শৈলকুপা উপজেলার কাঁচেরকোল জাঙ্গালিয়া গ্রামের শওকত আলী একজন ভন্ড প্রতারক কবিরাজ। দীর্ঘদিন ধরে এলাকার নিরীহ মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে অপচিকিৎসা চালিয়ে আসছে। এই ভন্ড কবিরাজের কারণে আমার ভাইকে আজ দুনিয়া ছেড়ে চলে যেতে হয়েছে। করোনা উপসর্গে শ্বাসকষ্ট থাকা সত্বেও আমার ভাইকে হাসপাতালে ভর্তি হতে দেয়নি সে। প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট আর বুকে ব্যাথার রোগীকে ভৈষজ ওষুধ আর ঝাড়ফুঁক দিয়ে সে আমার ভাইকে চিকিৎসা করেছিলেন। চিকিৎসার সময় প্রচন্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে ছটফট করলেও সে আমার ভাইকে হাসপাতালে ভর্তি হতে দেয়নি। আমার পরিবারের সদস্যরা সহজভাবে নিয়েই তাকে বাড়ি নিয়ে এসেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত আমার ভাই চলে গেলেন। মৃত্যুর আগে সে বারবার হাসপাতালের কথা বললেও কোনো কাজ হয়নি। কবিরাজের অপচিকিৎসার হয়ে শুধু আমার ভাই নয়, অনেকেই এভাবে ঝরে পড়ছে। কিন্তু এই ভণ্ডামির একটা শেষ সুফল হিসেবে দেখার জন্য প্রশাসনের কাছে জোর দাবী জানান তিনি। দ্রুত তাকে আইনের আওতায় এনে তাকে আটকানো প্রয়োজন। ভেঙ্গে গুড়িয়ে দিন ভন্ড কবিরাজের আস্তানা। সাথে এলাকাবাসীকে এ বিষয়ে সচেতন হওয়ার আহবান জানাচ্ছি। নইলে ভবিষ্যতে আমার ভাইয়ের মতো আরও অনেককেই এভাবে চলে যেতে হবে। এলাকাবাসী জানান, তিনি দীর্ঘদিন ধরে কবিরাজি করছেন ভৈষজ ঔষধের মাধ্যমে। আবার ঝাড়ফুঁকও করেন।
এব্যপারে কবিরাজ সৈকত আলীর সাথে কথা বলতে গেলে পালিয়ে যায় এবং তার মুঠোফোনে যোগাযোগ করতে চাইলেও ব্যর্থ হয়।