তখন গভীর রাত। সবাই ঘুমে আচ্ছন্ন। ঘুটঘুটে অন্ধকার। জনমানব ও যানবাহনহীন রাস্তা। বাড়িতে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লেন স্ত্রী। প্রচন্ড শ্বাস কষ্ট নিয়ে জীনন প্রদ্বীপ প্রায় যায় যায় অবস্থা। মুমুর্ষ স্ত্রীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার কোন উপায় নেই। স্ত্রীর বাঁচার এই আকুতি দেথে আরো অসহায়ত্ব বেড়ে গেলো স্বামীর। স্বামী ফোন করলেন পুলিশকে। এই মধ্যরাতে পুলিশের টহল গাড়ি এসে স্ত্রীকে উদ্ধার করে ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে ভর্তি করালেন। গল্পটি সিনেমা বা নাটকের নয়। সোমবার মধ্যরাতে ঝিনাইদহ প্রেসক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ও দৈনিক সমকালের জেলা প্রতিনিধি মাহমুদ হাসান টিপুর স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়লে ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মিজানুর রহমান পুলিশের টহল গাড়ি পাঠিয়ে সহায়তা করেন বলে নিজেই তার ফেসবুকে উল্লেখ করেন। করোনাকালে এমন মানবিক কর্মকান্ড ঝিনাইদহ পুলিশ বিভাগ বহু নজীর স্থাপন করে চলেছে। সম্প্রতি ঝিনাইদহ সদর থানার এএসআই আনোয়ার হোসেন নাইট ডিউটি করার অবস্থায় দেখেন আফরোজা খাতুন নামে এক গর্ভবতী নারীকে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তার পরিবার। প্রসব বেদনায় কাতিরাচ্ছেন আফরোজা। কোন সাহায্য পাচ্ছেন না। তখন রাত দুইটা। এএসআই আনোয়ার হোসেন এগিয়ে আসেন। ঝিনাইদহ আরাপপুর রাবেয়া হাসপাতালের মালিককে ফোন করে রাতেই টহল গাড়িতে উঠিয়ে সিজারের ব্যবস্থা করেন। তথ্য নিয়ে জানা গেছে করোনা ভাইরাস শুরুর পর থেকে ঝিনাইদহ জেলা পুলিশ নানামুখী কর্মকান্ড চালিয়ে যাচ্ছে। নিয়মিত অপরাধ দমন ও মাদক বিরোধী অভিযানের পাশাপাশি মানবিক কাজে অংশ নিচ্ছেন। পুলিশ সুপার মুনতাছিরুল ইসলামের নেতৃত্বে পুলিশ কর্মকর্তাগন এই মানবিক কাজে অংশ নিচ্ছেন। ত্রান বিতরণ, করোনা মোকাবেলা ও সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ করতে গিয়ে পুলিশ সদস্যরা নিজেরাই করোনা আক্রান্ত হচ্ছেন। তুবও তারা জনকল্যানে রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালনে পিছপা নয়। গতবছর বছর থেকে এপর্যন্ত ঝিনাইদহের বেশ কয়েকজন পুলিশ করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। সর্বশেষ কালীগঞ্জ উপজেলার তত্বিপুর পুলিশ ক্যাম্পের কনস্টেবল মো: মশিউর রহমান করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা যান। এছাড়া বর্তমান ২০ জন পুলিশ করোনা আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছেন বলে পুলিশ সুপারের দপ্তর থেকে জানা গেছে। এদিকে পুলিশের এই মানবিক কর্মকান্ড মানুষের মাঝে গভীর রেখাপাত করেছে। মানুষ এখন ভাবতে শুরু করেছে “জন্মে পুলিশ মরণে পুলিশ”। ঝিনাইদহ সদর থানার ওসি মোহাম্মদ মিজানুর রহমান জানান, করোনা কালীন পরিস্থিতিতে পুলিশের কর্মতৎপরতা বেড়ে গেছে। লকডাউনে মানুষকে ঘরে রাখার পাশাপাশি সচেতনতা, সুরক্ষা, মানবিক তৎপরতা ও অপরাধ নিয়ন্ত্রন করতে হচ্ছে। এতে ২৪ ঘন্টা পুলিশ বাহিনীকে কাজ করতে হচ্ছে।