28.9 C
Bangladesh
Tuesday, 24, June 2025
spot_img

কালীগঞ্জে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাংস বিক্রির অভিযোগ

ঝিনাইদহের কালীগঞ্জে যত্রতত্রভাবে মাংস বিক্রি হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। শহরের বিভিন্ন স্থানে যে যার মতো যেখানে—সেখানে মাংসের দোকান খুলে বসেছে। এসব স্থানে অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে বিক্রি হচ্ছে মাংস। বিক্রির পর দোকানগুলোর মধ্যে কুকুর শুয়ে থাকে। অনেক সময় মাংস কাটার কাঠের গুঁড়ি কুকুর চেটে খায়। কুকুর শুয়ে থাকা সেই খাটের ওপর মাংস রেখেই আবার বিক্রি করা হচ্ছে।

নিয়ম রয়েছে পশু জবাইয়ের পূর্বে পরীক্ষা করে নেওয়ার। কিন্তু পরীক্ষা—নিরীক্ষা তো দূরের কথা, ন্যূনতম কোনও স্বাস্থ্যবিধিই মানা হচ্ছে না কালীগঞ্জের মাংস বিক্রির দোকানগুলোতে। শহরের মধ্যে নেই কোনও পশু জবাইয়ের কসাইখানা। যার কারণে ক্রেতারা সুস্থ না অসুস্থ গরু—ছাগলের মাংস কিনছেন তা তারা নিজেরাও জানেন না। খাতা—কলমে এসব দেখভাল করার জন্য কর্মকর্তারা থাকলেও বাস্তবে তাদের কোনও কর্মকাণ্ড পরিলক্ষিত হয় না।
জানা গেছে, কালীগঞ্জ শহরের নতুন বাজার, হাটচাঁদনী, নলডাঙ্গা রোড, হাসপাতাল রোড, কাঠের ব্রিজের মুখ, নীমতলা বাসস্ট্যান্ডসহ বেশ কিছু স্থানে গরু ও ছাগলের মাংস বিক্রি হয়। এসব মাংস বিক্রেতারা কোথায়, কখন এবং কীভাবে গরু—ছাগল জবাই করেন তা কেউ জানে না। নিজেদের ইচ্ছেমতো রুগ্ন ও অসুস্থ গরু—ছাগল যেখান—সেখানে জবাই করে দোকানে এনে বিক্রি করছেন বলে ক্রেতাদের অভিযোগ।
গরু ও ছাগল জবাইয়ের পূর্বে ভেটেরিনারি কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে স্বাস্থ্য পরীক্ষার পর তা জবাই করার নিয়ম থাকলেও বাস্তবে সেটা করা হচ্ছে না। কোথায়, কীভাবে এসব পশু জবাই হচ্ছে তাও জানেন না স্যানিটারি ইন্সপেক্টর। এসব দেখভাল করার জন্য একজন কসাইখানা পরিদর্শক থাকলেও তিনি নিয়মিতভাবে তা পরিদর্শন করেন না বলেও অভিযোগ রয়েছে।
অভিযোগে আরও জানা গেছে, যেখানে—সেখানে গরু ও ছাগল জবাই করে সেটা কয়েকজন মাংস বিক্রেতা ভাগ করে শহরের বিভিন্ন স্থানে বিক্রি করে থাকেন। মাংস ঝুলিয়ে বিক্রি করার নিয়ম থাকলেও সেসব নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেন না বিক্রেতারা।
এসব অভিযোগের ব্যাপারে নতুন বাজারের ছাগলের মাংস বিক্রেতা কবির হোসেন জানান, তিনি নিজ বাড়ি থেকে ছাগল জবাই করে দোকানে এনে বিক্রি করেন। জবাইয়ের পূর্বে ছাগলের কোনও স্বাস্থ্য পরীক্ষা তিনি করেন না।
মাংস বিক্রি শেষে দোকান অরক্ষিত অবস্থায় রেখে যান এবং সেখানে কুকুর শুয়ে থাকে—এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘বিষয়টি দুঃখজনক। এখন থেকে দোকানটি ঘিরে রাখবো। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আর ঘটবে না।’
শিবনগর গ্রাম থেকে মাংস কিনতে আসা শমসের আলী জানান, অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাংস বিক্রি হচ্ছে জেনেও অনেকটা বাধ্য হয়ে তা কিনতে হচ্ছে। যথাযথ কর্তৃপক্ষ এ ব্যাপারে কার্যকরী ব্যবস্থা না নিলে সারাদিন চিৎকার করলেও তাতে কোনও কাজ হবে না।
এ ব্যাপারে কালীগঞ্জ পৌরসভার স্যানিটারি ইন্সপেক্টর আলমগীর কবির বলেন, ‘অনেক সময় অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে মাংস বিক্রি হয়ে থাকে। আমরা সেটা নিয়মিতভাবে দেখার চেষ্টা করি। কিন্তু পৌর এলাকার মধ্যে কোনও কসাইখানা নেই। একটি ছিল। কিন্তু সেটিও নষ্ট হয়ে পরিত্যাক্ত হয়ে গেছে। এরপর নতুন করে আর কোনও কসাইখানা করা হয়নি। কসাইখানা নির্মাণ তো আমি করতে পারি না, এ ব্যাপারে আপনি পৌর মেয়রের সঙ্গে কথা বলেন।’
কালীগঞ্জ পৌরসভার কসাইখানা পরিদর্শক আ স ম আব্দুস সামাদ বলেন, ‘কর্তৃপক্ষের যথাযথ ব্যবস্থপনার অভাবে আমরা সঠিকভাবে কাজ করতে পারছি না।’
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডাক্তার রেজাউল ইসলাম বলেন, ‘এটি দেখভাল করবেন পৌরসভা। এখানে আমাদের কোনও এক্টিভিটিস নেই। তবে পৌরসভার নিজস্ব জায়গা থাকলে আমরা প্রজেক্টের মাধ্যমে একটি ভালো কসাইখানা করে দিতে পারি। এ ব্যাপারে আমি মেয়রের সঙ্গে কথাও বলেছি।’
এ বিষয়ে কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইসরাত জাহান বলেন, ‘এটি তো পৌরসভার দায়িত্ব। আমি স্যানিটারি ইন্সপেক্টরকে কার্যকরী ব্যবস্থা নিতে বলবো। এছাড়া স্বাস্থবিধি না মেনে পশু জবাই ও বিক্রি করলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles