ঝিনাইদহের কোটচাঁদপুর উপজেলায় মহামারী করোনায় দিন দিন বেড়েই চলেছে শনাক্তের হার। সেই সাথে বাড়ছে মৃত্যু। প্রতিদিন নতুন নতুন রোগী করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। দীর্ঘ হচ্ছে মুত্যুর মিছিল। সীমান্তবর্তী এই উপজেলায় কোন প্রকারেই থামানো যাচ্ছে না করোনায় মৃত্যু ও আক্রান্তের সংখ্যা।
উপজেলা স্বাস্থ্য বিভাগের সূত্র মতে গত জুন মাসে ৪৩৭ জনের নমুনা সংগ্রহ করে ১৩২ জন রোগী করোনা শনাক্ত (পজিটিভ) হয়। আক্রান্তের হার ৩০ দশমিক ২ ভাগ। সূত্র মতে জুন ৩০ তারিখ পর্যন্ত ৪ জন করোনা পজিটিভ নিয়ে মৃত্যু হয়। গত এক সপ্তাহে উপজেলায় ৩৩৪ জন ব্যাক্তির শরীর থেকে নমুনা সংগ্রহ করে ১১৩ জন ব্যাক্তির করোনা পজিটিভ হয়। আক্রান্তের হার ৩৩ দশমিক ৮ ভাগ। এছাড়াও উপজেলার পৌর শহর থেকে শুরু করে গ্রামাঞ্চলের প্রতিটা ঘরে করোনার উপসর্গ নিয়ে মানুষ বাড়িতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এদের মধ্যে বিভিন্ন এলাকায় করোনা উপসর্গ নিয়ে প্রতিদিনই হচ্ছে মুত্যু। ফলে করোনা আতঙ্কের জনপদ হয়ে উঠেছে ঝিনাইদহের কোটচঁদপুর উপজেলা।
হাসপাতালে করোনা রোগী বৃদ্ধি পাওয়ায় হিমশিম খাচ্ছে চিকিসক ও নার্স সহ হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মীরা। রোগীর সঠিক চিকিৎসা ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশনা প্রদান করছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ আব্দুর রশিদ। তিনি বলেন, পরিস্থিতি এতটায় ভয়াবহ যে করোনা রোগীদের চিকিৎসা সেবা দিতে গিয়ে এরই মধ্যে ১ জন চিকিৎসক, ৩ জন নার্স, ২ জন মেডিকেল এসিস্টেন্ট, ১ জন স্বাস্থ্য সহকারি ও ২ জন পরিছন্ন কর্মী করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন।
ডাঃ রশিদ আরো বলেন, প্রান্তিক জনগোষ্টির করোনা সংক্রমন রোধে উপজেলার বিভিন্ন কমিউনিটি ক্লিনিকে স্বাস্থ্য কর্মীদের মাধ্যমে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ানো হয়েছে। সেই সাথে ঠান্ডা-জ্বরে আক্রান্ত হলে হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এদিকে সংক্রমণ রোধে (১জুলাই) থেকে দেশব্যাপী সর্বাত্মক কঠোর লকডাউন ঘোষনা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে জন প্রশাসন মন্ত্রনালয়। সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে কঠোর অবস্থান নেয় প্রশাসন সহ সশস্ত্র বাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি সদস্যরা। পৌর শহরের মেইন বাজার সহ উপজেলার বিভিন্ন হাট বাজারে মাইকিং করে সচেতনতা ছাড়াও মহড়া দিচ্ছেন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট এবং আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। সচেতনতার পাশাপাশি নির্দেশনা অমান্যকারীদের বিরুদ্ধে নিচ্ছেন ব্যবস্থা, করছেন জরিমানা।
নিত্যপ্রয়োজনীয় ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ছাড়া সকল দোকানপাট বন্ধ রাখা হয়েছে। প্রশাসনের নজরদারী থাকলেও অনেকে প্রয়োজন ছাড়া ঘর থেকে বের হচ্ছেন। এদিকে করোনার এই মহামারির মধ্যে কিছু মানুষের মধ্যে উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। প্রশাসনের সচেতনতামূলক কোন কর্মসূচীই যেন পৌঁছাচ্ছে না এই সব মানুষের মধ্যে। প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে অনেক ব্যবসায়ী স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই অবাধে ব্যবসা চালিযে যাচ্ছেন। এমনকি মাস্ক ব্যবহারে রয়েছে অনিহা। দেখে বুঝার উপাই নেই মহামারী করোনার থাবা পড়েছে এই দেশে। এদের অনেকে আবার প্রশাসনের হাতে ধরা পড়ে অনেক সময় গুনতে হচ্ছে জরিমানা।
কোটচাঁদপুর উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও নির্বাহী ম্যাজিষ্ট্রেট আছাদুজ্জামান রিপন জানান, সরকারি নির্দেশনা বাস্তবায়নে স্থানীয় উপজেলা প্রশাসনের সহযোগিতায় পুলিশ, সেনাবাহিনী, গ্রাম পুলিশ ও আনসার সদস্যরা দিন রাত কাজ করে যাচ্ছে। বাড়ানো হয়েছে নজরদারি। বিভিন্ন সময়ে মোবাইল কোর্টের মাধ্যমে করা হচ্ছে জরিমানা। তিনি বলেন, করোনা সংক্রমন রোধে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার পাশাপাশি আমাদের সকলকে আরো সচেতন হতে হবে।