28.9 C
Bangladesh
Tuesday, 24, June 2025
spot_img

গ্রাহকের ৫ কোটি টাকা নিয়ে জনতা ব্যাংকের পিওন উধাও

সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার পৌর শহরের দ্বারিয়াপুরে অবস্থিত জনতা ব্যাংক শাহজাদপুর শাখার শতাধিক গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট থেকে রহস্যজনকভাবে প্রায় ৫ কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে। গতকাল রবিবার সকালে ২০-২৫ জন গ্রাহক তাদের অ্যাকাউন্ট থেকে টাকা উত্তোলন করতে যান। এ সময় ব্যাংক কর্তৃপক্ষ তাদের অ্যাকাউন্টে কোনো টাকা নেই বলে জানায়। ফলে ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সঙ্গে তাদের বাগ্বিতণ্ডা শুরু হয়। এ খবর মুহূর্তে সর্বত্র ছড়িয়ে পড়লে শত শত গ্রাহক ব্যাংকে এসে ভিড় জমান ও খোয়া যাওয়া টাকা ফেরতের দাবি জানিয়ে ব্যাংক ঘেরাও করেন।

এ সময় গ্রাহকদের মধ্যে চরম উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। পরিস্থিতি বেগতিক দেখে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে শাহজাদপুর থানা পুলিশ এক ঘণ্টা চেষ্টা চালিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে। এরপর টাকা ফেরত দেওয়ার আশ্বাসে গ্রাহকরা ব্যাংক এলাকা ত্যাগ করেন। পুলিশ ঘটনাস্থল ত্যাগ করলে জনতা ব্যাংক শাহজাদপুর শাখার ম্যানেজার জেহাদুল ইসলাম কৌশলে ব্যাংক থেকে সটকে পড়েন। এ সময় তার মোবাইল ফোনও বন্ধ পাওয়া যায়। এদিন বিকেল পর্যন্ত তাকে একাধিকবার কল করেও পাওয়া যায়নি। তিনি কোথায় আছেন, ব্যাংকের কেউ তা বলতে পারেনি।

এদিকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ এ ঘটনার জন্য ব্যাংকের অস্থায়ী পিয়ন কাম পরিচ্ছন্নতাকর্মী আওলাদ হোসেন আকন্দ রঞ্জুকে দায়ী করছে। কারণ তাকে বৃহস্পতিবার থেকে পাওয়া যাচ্ছে না।

এ ঘটনা তদন্তে জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ জেলা অফিসের ডিজিএম জাহিদুল আলমকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। এ কমিটি গতকাল বিকেলে জনতা ব্যাংক শাহজাদপুর শাখায় উপস্থিত হয়ে তদন্ত শুরু করেছে। এ তদন্ত কমিটির অন্যরা হলেন জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ জেলা অফিসের এসপিও মো. আসাদুজ্জামান, পিও মো. মনিরুজ্জামান, পিও মো. শাহ আলম সিদ্দিকী ও আইটি শাখার সিনিয়র অফিসার ওমর ফারুক।

এ বিষয়ে জনতা ব্যাংক সিরাজগঞ্জ জেলা অফিসের ডিজিএম জাহিদুল আলম বলেন, ‘আমিও এসে ম্যানেজারকে পাইনি। হয়তো তিনি কোনো কারণে বাইরে আছেন। উনি আসবেন ও মোবাইল ফোনও খুলবেন।’

তিনি আরও বলেন, ‘এ ঘটনাটি ব্যাংকের বাইরে ঘটেছে। ব্যাংকের কেউ এর সঙ্গে জড়িত নয়। তদন্তে যদি কারও সম্পৃক্ততা পাওয়া যায়, তবে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

ডিজিএম আরও বলেন, ‘কতজন গ্রাহকের টাকা খোয়া গেছে তা এখনো নিরূপণ করা সম্ভব হয়নি। তবে ধারণা করা হচ্ছে, ৮-১০ জনের মতো হবে। ইতিমধ্যেই এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত পিয়ন রঞ্জুকে ধরতে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। আশা করি অচিরেই তাকে ধরা সম্ভব হবে। তাকে ধরতে পারলে সঠিক তথ্য বেরিয়ে আসবে।’

যেসব গ্রাহকের টাকা খোয়া গেছে তাদের মধ্যে বাচামারা গ্রামের রজিনা খাতুনের ৫০ হাজার, আফরোজা বেগমের ১ লাখ, প্রাণনাথপুর গ্রামের মহিতন খাতুনের ২ লাখ ৫৬ হাজার, বাচামারা গ্রামের আবু হানিফ খানের ৫ লাখ, টিয়ারবন্দর গ্রামের শিখা খাতুনের ১ লাখ ৯০ হাজার, মাকড়কোলা গ্রামের সুজন মিয়ার ১ লাখ ৫০ হাজার, বাড়াবিল গ্রামের আবদুল গফুরের ১ লাখ ৯০ হাজার, প্রাণনাথপুর গ্রামের লাভলী খাতুনের ৮ লাখ ৩০ হাজার ৬২২, বাচামারা গ্রামের মনোয়ারা খাতুনের ১১ লাখ ৬৯ হাজার ৫৫৫ টাকা উধাও হয়ে গেছে। তাদের দাবি, ব্যাংকের বড় ধরনের কর্মকর্তারা এর সঙ্গে জড়িত না থাকলে রঞ্জুর মতো একজন পিয়নের পক্ষে একা জাল জালিয়াতি করে এত টাকা আত্মসাৎ করা সম্ভব নয়। তারা এর সঙ্গে জড়িত সবাইকে খুঁজে বের করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেন। এ ছাড়া অবিলম্বে তাদের খোয়া যাওয়া টাকা ফেরত দেওয়ার দাবি জানান।

এদিকে জনতা ব্যাংক শাহজাদপুর শাখার অস্থায়ী পিয়ন কাম পরিচ্ছন্নতাকর্মী আওলাদ হোসেন আকন্দ রঞ্জুর মা আনোয়ারা বেগম ও ভাতিজি জান্নাতি খাতুন বলেন, এ ঘটনায় রঞ্জুকে ফাঁসানো হয়েছে। বিষয়টি এ ব্যাংকের ম্যানেজারসহ সবাই জানেন। তারা আরও বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার রঞ্জু অফিসে গেলে ম্যানেজার তাকে ১৫ দিনের ছুটি দিয়ে কোথাও থেকে বেড়িয়ে আসতে বলেন। সেই থেকে সে উধাও। কোথায় গেছে তা আমাদের জানা নেই। রঞ্জু ওই ব্যাংকের পিয়ন হলেও সে ২০ বছর ধরে কোট-প্যান্ট-টাই পরে বড় সাহেবের মতো চেয়ার-টেবিলে বসে অফিস করত। সে যে টেবিলে বসত বৃহস্পতিবার ব্যাংক কর্তৃপক্ষ রহস্যজনকভাবে সেই টেবিল-চেয়ার ওই স্থান থেকে সরিয়ে ফেলেছে। আমরা এর প্রতিবাদ করলে ম্যানেজার জেহাদুল ইসলাম বলেন, ও চেয়ার-টেবিলের যোগ্য না, তাই সরিয়ে ফেলা হয়েছে। তাহলে এতদিন বসতে দিয়েছেন কেন এ প্রশ্ন করলে তার কোনো সদুত্তর তিনি দিতে পারেননি।’ তারা বলেন, ‘এ ঘটনার জন্য রঞ্জুকে এককভাবে দায়ী করা হলে আমরা ব্যাংকের সবার বিরুদ্ধে মামলা করব।’

এ বিষয়ে রঞ্জুর শ্যালক ইসরাফিল শেখ বলেন, ‘রঞ্জু উধাও হওয়ার পর স্ত্রী শাকিলা খাতুন তার আট বছর বয়সী এক মেয়ে নিয়ে আমাদের বাড়িতে এসে আশ্রয় নেয়। কিন্তু টাকার জন্য গ্রাহকরা আমাদের বাড়িতে এসে ভিড় জমান ও ঝামেলা শুরু করেন। পরে শাকিলা তার মেয়েকে নিয়ে আমাদের বাড়ি ছেড়ে আত্মগোপন করেছে। তারা কোথায় গেছে তা আমাদের জানা নেই।’ তিনি দাবি করেন, এই টাকা আত্মসাতের জন্য তার ভগ্নিপতি একা দায়ী নয়। এ ব্যাংকের অনেকেই জড়িত। তিনি বলেন, ‘রঞ্জু এক মাস আগে প্রাইভেট কার নিয়ে ঢাকায় তার এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে এসেছে। সে মাঝেমধ্যে ওই কর্তার বাসায় বড় বড় মাছ ও কাপড়চোপড় নিয়ে দিয়ে আসে। নিজেকে এক এমডির আত্মীয় পরিচয় দিত। ওই এমডির ভয়ে ব্যাংকের কেউ তাকে কিছু বলতে সাহস পেত না।’

শ্যালক ইসরাফিল বলেন, ওই এমডির নাম আমাদের জানা নেই। তবে রঞ্জু চাকরি দেওয়ার কথা বলে অনেকের কাছে থেকে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। সে সবসময় চলাফেরা করত প্রাইভেট কারে। তার ভয়ে আমরা এতদিন মুখ খুলতে সাহস পাইনি। সে আমার কাছে থেকে গরু বিক্রির ৮০ হাজার ও সমিতি থেকে তোলা ঋণের ১ লাখ টাকা নিয়ে গেছে। এখন এ টাকা ফেরত না পেলে আমি পথে বসে যাব।’

ব্যাংক থেকে সটকে পড়ার আগে ম্যানেজার জেহাদুল ইসলাম উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন, ‘পিয়ন রঞ্জু আকন্দ ব্যাংকের নকল সিল তৈরি করে গ্রাহকদের টাকা আত্মসাৎ করেছে। এ ছাড়া সে ব্যাংকের এমডির আত্মীয় পরিচয় দিয়ে ব্যাংকের সবাইকে জিম্মি করে অপকর্ম করেছে।’

এ বিষয়ে শাহজাদপুর থানার ওসি নজরুল ইসলাম মৃধা বলেন, ‘এ ঘটনায় এখনো কোনো মামলা বা অভিযোগ করা হয়নি। অভিযোগ পেলে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles