28.9 C
Bangladesh
Friday, 16, May 2025
spot_img

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালে জাল টিকেট তৈরীর অভিযোগ,ওষুধ হরিলুট

ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের সরকারী ওষুধ হরিলুট হচ্ছে। যে যেভাবে পারছে সরকারী দামি দামি ওষুধ তুলে নিচ্ছে। ফলে দুর দুরান্ত থেকে আসা গ্রামের হতদরিদ্র রোগীরা হাসপাতালের সরকারী ওষুধ পাচ্ছে না। হাসপাতালের আশপাশে গড়ে ওঠা ক্লিনিক ও প্যাথলজির কর্মচারি এবং দালাল চক্র এই অপকর্মের সঙ্গে জড়িত বলে অভিযোগ উঠেছে। এছাড়াও রয়েছে মুখচেনা কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তি, হাসপাতালের আশেপাশে বসবাসরত প্রতিবেশি, কতিপয় মুক্তিযোদ্ধা ও ইন্টার্নি করতে আসা শিক্ষার্থীরা। দুপুর পার হতেই আসতে শুরু করে এই সুবিধাভোগী চক্রটি। তারা একাধিক স্লিপ নিয়ে ব্যাগ ভর্তি সরকারী ওষুধ তুলে নিয়ে যাচ্ছে। এই চিত্র প্রতিদিনের হলেও কোন প্রতিকার নেই। এদিকে এ ভাবে জাল বহির্বিভাগীয় রোগীর টিকেট তৈরী করে বিপুল পরিমান ওষুধ উত্তোলনের সময় ধরা পড়েছেন সাদ্দাম হোসেন ও রাতুল নামে দুই যুবক। ধরাপড়ার পর তাদের হাসপাতালের তত্বাবধায়ক সৈয়দ রেজাউল ইসলামের দপ্তরে নিয়ে যাওয়া হয়। মুচলেকা নিয়ে তাদের ছেড়ে দেন তত্বাবধায়ক। রোববার ঘড়ির কাটায় ঠিক দুপুর ১২.৪০টা। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের ঔষাধাগারের সামনে জটলা। হাসপাতালে মাস্টার রোলে কর্মরত মুস্তাক আহম্মেদ তার স্ত্রীর জন্য কিলম্যাক্স নামে একটি ওষুধ নিতে যান। তার নজরে পড়ে দুই যুবক একাধিক বহির্বিভাগীয় রোগীর টিকেট নিয়ে ব্যাগে করে ওষুধ ভরছেন। বিষয়টি তার সন্দেহ হলে তিনি সাদ্দাম ও রাতুলকে ডেকে নিয়ে যান তত্বাবধায়কের দপ্তরে। তাদের কাছে পাওয়া যায় ডাঃ মারুফ সাক্ষরিত একাধিক টিকেট। মাষ্টার রোলের কর্মচারী মুস্তাক আহম্মেদ সন্দেহ দুর করতে ডাঃ মারুফের কাছে ফোন দিলে তিনি ওই যুবকদের চেনেন না বলে জানিয়ে দেন। ওষুধসহ ধরাপড়ার পর সাদ্দাম হোসেন জানান, তিনি হাসপাতালের সামনে মেডিকেট নামে একটি বেসরকারী ক্লিনিকে চাকরী করেন। আর রাতুল ছাত্র। তাদের বাড়ি যশোরের চৌগাছায়। পরীক্ষা করে দেখা গেছে তাদের কাছে থাকা চারটি বহির্বিভাগীয় রোগীর টিকেট জাল। এই চক্রটি আলিম, বুলবুলি ও অহনার নামে জাল টিকেট তৈরী করে তাতে মুলবান মুল্যবান ওষুষ লিখে নেন। একটি টিকেট ছিল রাতুলের নামে। তথ্য নিয়ে জানা গেছে, ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের আশেপাশে থাকা ক্লিনিকে প্রতিনিয়ত রোগীর অপারেশন হচ্ছে। এই কাজে ১৫/২০ জন দালাল হাসপাতাল থেকে রোগী ভাগিয়ে নেওয়ার কাজে লিপ্ত। ঝিনাইদহ আইএইচটি, ম্যাটস ও নার্সিং ইন্সটিটিউটের শিক্ষার্থীরা এসব ক্লিনিকে খন্ডকালীন চাকরী করেন। তারা ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে ডিউটি করার কারণে অনেকে আবার চিকিৎসকদের সাক্ষর নকল করতে পারেন। অনেক সময় চিকিৎসকরা ইন্টার্নিরত শিক্ষার্থীদের আবদারে একাধিক বহির্বিভাগীয় রোগীর টিকেট নাম্বার দিয়ে ওষুধের স্লিপ দেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক হাসপাতালের একাধিক কর্মচারী জানান, প্রতিদিন যে ভাবে হাসপাতালের সরকারী ওষুধ লুটপাট হচ্ছে তা রোধ না করতে পারলে গ্রামের দরদ্রি রোগীরা মাসব্যাপী ওষুধ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হবে। বিষয়টি নিয়ে হাসপাতালের ঔষাধাগারের ইনচার্জ রুহুল আমিন জানান, প্রতিদিন রোগীর যে চাপ থাকে তাতে আমার একার পক্ষে টিকেট যাচাই বাছাই করা সম্ভব হয় না। তিনি বলেন, ঔষাধাগারে চারটি পদের মধ্যে তিনটিই খালি। তাই রোগীর ভীড়ে আসল নকল যাচাই করা কষ্টকর হয়ে পড়ে। তাছাড়া সমাজের এমন কিছু মানুষ এসে এমন চাপ সৃষ্টি করেন তাতে আমরা অসহায় হয়ে পড়ি। ঝিনাইদহ সদর হাসপাতালের তত্বাবধায়ক ডাঃ সৈয়দ রেজাউল ইসলাম জানান, আমি নতুন যোগদান করেছি। সাদ্দাম আর রাতুল নামে যে দুইজন জাল টিকেট নিয়ে ধরা পড়েছিল তারা ছাত্র। এই কারণে তাদের সহানুভুতির দৃষ্টিতে দেখা হলো। তিনি বলেন বিষয়টি আমি পর্যবেক্ষন করছি, ভবিষ্যতে যাতে এমনটি না হয় সে জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। ঝিনাইদহের সনাক সভাপতি অধ্যক্ষ সাইদুল আলম জানান, জাল বহির্বিভাগীয় রোগীর টিকেটে ওষুধ নেওয়ার প্রবণতা রোধে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষকেই কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। গ্রামের হতদরিদ্র মানুষ যাতে চিকিৎসকের ব্যবস্থাপত্র অনুযায়ী ওষুধ পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles