টাঙ্গাইলের মির্জাপুর উপজেলার বংশাই ও ঝিনাই নদে পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে ভাঙন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে মির্জাপুরের কুর্ণী ফতেপুর রাস্তার হিলড়া বাজারের উত্তর পাশে প্রায় ৩০০ মিটার রাস্তায় নতুন করে ভাঙন চলছে। ওই স্থান ছাড়া নদের তীরবর্তী আরও অন্তত ১০টি গ্রামে ভাঙন দেখা দিয়েছে। এতে এসব গ্রামের মানুষ উদ্বেগ–উৎকণ্ঠার মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।
স্থানীয় কয়েকজন বলেন, তিন সপ্তাহ ধরে ভারী বর্ষণ ও উজান থেকে আসা পানির কারণে ওই দুই নদে পানি বাড়তে থাকে। এতে এসব নদের বিভিন্ন এলাকায় ভাঙন শুরু হয়।
মঙ্গল ও বুধবার সরেজমিন দেখা গেছে, হিলড়া বাজারের উত্তর পাশে নতুন করে ভাঙন শুরু হয়েছে। ওই স্থানে গত বছর ভাঙনের কারণে চারটি টিনের ঘর অন্যত্র সরিয়ে নিতে হয়েছিল। এ ছাড়া বাজারের পাশ দিয়ে ফতেপুরের রাস্তাটি গত বছর ভেঙে গিয়েছিল। ওই রাস্তায় থাকা ছোট সেতুটিও নদে বিলীন হয়ে যায়। এতে রাস্তা দিয়ে চলাচলকারী ব্যক্তিগত গাড়ি, মাইক্রোবাস, পিকআপসহ যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এখনো নতুন করে রাস্তা না হওয়ায় চলাচল বন্ধ রয়েছে। ওই একই স্থানে চার দিন ধরে ব্যাপক ভাঙন শুরু হয়েছে। এরই মধ্যে পাশে থাকা পাটখেতের একাংশ নদে বিলীন হয়েছে।
হিলড়া গ্রামের মধ্যপাড়া এলাকার এছাক মোল্লা বলেন, ‘অহন বারো মাসই পানি থাকে। আগে তো নদী হুকিয়া গেত। এই বালু কাটার নিগা এই কাম অইছে। পানি থাকে ঠিকই। কিন্তু আমাগো রাস্তার কাম শ্যাষ অইছে।’
ফতেপুর গ্রামের ভ্যানচালক গৌর মনিদাস বলেন, ‘আমাগো কপাল খারাপ। ভাঙার জন্য মাল নিয়্যা না অইলেও তিন-চার কিলোমিটার ঘুইর্যা ফতেপুর যাওন লাগে। আমাগো ইনকামও কইম্যা গ্যাছে।’
ভাতকুড়া গ্রামের ষষ্ঠ শ্রেণির শিক্ষার্থী তপু বিশ্বাস বলে, নদীভাঙনের কারণে নদের পাড় দিয়ে যাতায়াত করতে তাদের ভয় হয়।
ফতেপুর থেকে হেঁটে মির্জাপুরের কুমুদিনী হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে যাচ্ছেন রঞ্জু। তিনি বলেন, নদীভাঙনের কারণে এই রাস্তায় সিএনজিচালিত অটোরিকশা চলাচল বন্ধ হয়ে গেছে। প্রায় এক কিলোমিটার হেঁটে তাঁকে অটোরিকশায় উঠতে হবে।
এদিকে ওই এলাকা ছাড়াও ঝিনাই নদের পারদিঘী, ফতেপুর, থলপাড়া, বৈলানপুর, পাতিলাপাড়া ও চাকলেশ্বর এবং বংশাই নদের গোড়াইল, বাওয়ার কুমারজানী, পোষ্টকামুরী পূর্বপাড়া এলাকাতেও ভাঙন শুরু হয়েছে।
গোড়াইল গ্রামের জয়নাল মিয়া জানান, ভাঙনের কারণে দুই বছর আগেই তাঁদের ঘর নদে গিয়েছিল। এবারও নদে ভাঙন শুরু হয়েছে। তাঁদের ঘরবাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নিতে হবে।
পোষ্টকামুরী পূর্বপাড়া এলাকার বাসিন্দা মজিবুর রহমান জানান, নদীভাঙনের কারণে তাঁর ২৮ শতাংশ জমির ওপর থাকা বাড়িটির মাত্র ২ শতাংশ রয়েছে। নদীভাঙন রোধে তিনিসহ আশপাশের লোকজন নিজেদের উদ্যোগে নদের বাঁশ দিয়ে বালুর বস্তা ফেলছেন।
বাওয়ার কুমারজানী গ্রামের বিসমিল্লাহ রাইস মিলের মালিক জহির হোসেন জানান, ভাঙনের কারণে তাঁর ৫০ শতাংশ জমিতে গড়ে তোলা চাতাল কলের মাত্র ২০ শতাংশ জমি রয়েছে। ভাঙন রোধে নদের পারে তাঁরা বালুর বস্তা ফেলছেন।
এ বিষয়ে পানি উন্নয়ন বোর্ড টাঙ্গাইল কার্যালয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী সিরাজুল ইসলাম মুঠোফোনে জানান, ভাঙন রোধে তাঁরা সার্বক্ষণিক প্রয়োজনীয় কাজ করে যাচ্ছেন। নদ দুটির ভাঙনকবলিত এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেবেন।