প্রযুক্তির আধুনিকায়নে অপরাধের ধরন পরিবর্তনের প্রসঙ্গ টেনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়েই সরকার স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সকে (এসএসএফ) প্রশিক্ষিত ও দক্ষ করে তুলছে। তিনি বলেন, ‘আমার সব সময় চেষ্টা ছিল, এই আধুনিক জগতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে আমাদের এই বিশেষ বাহিনী (এসএসএফ) সঠিকভাবে প্রশিক্ষিত হবে এবং তাদের দক্ষতাও সব সময় বৃদ্ধি পাবে। সে জন্য দেশে-বিদেশে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থাসহ নানা রকম সুযোগ আমরা সৃষ্টি করে দিচ্ছি।’
এসএসএফের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে মঙ্গলবার সকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে (পিএমও) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তিনি গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ভার্চ্যুয়ালি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।
এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমানও অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর মেয়ে এবং অটিজম বিশেষজ্ঞ সায়মা ওয়াজেদ, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমদ কায়কাউস, পিএমও সচিব মো. তোফাজ্জল হোসেন মিয়া, প্রেস সচিব ইহসানুল করিম অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।
মুজিব বর্ষে স্পেশাল সিকিউরিটি ফোর্সের ৩৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর স্মারক হিসেবে এসএসএফের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান সম্পাদিত মুজিব-বাঙালি-বাংলাদেশ নামে একটি ই-বুক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে জাতির পিতার জন্মশতবার্ষিকী উদ্যাপন উপলক্ষে এসএসএফের পক্ষ থেকে ১০০টি গৃহহীন পরিবারের জন্য ২ কোটি টাকার একটি ব্যাংক ড্রাফট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে হস্তান্তর করেন মেজর জেনারেল মো. মজিবুর রহমান।
শেখ হাসিনা বলেন, ‘ভূরাজনীতি যেমন পরিবর্তনশীল, তেমনি অপরাধ জগৎটাও পরিবর্তিত হচ্ছে। প্রযুক্তির ব্যবহার আমাদের সুযোগ করে দিচ্ছে, জীবনকে গতিশীল করার পাশাপাশি কর্মক্ষেত্রকেও বিস্তৃত করছে। একইভাবে অপরাধী তথা জঙ্গিদেরও সুযোগ করে দিচ্ছে। কাজেই আমার সব সময় চেষ্টা ছিল এই আধুনিক জগতের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলার।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের দেশে প্রধানমন্ত্রী, রাষ্ট্রপতি বা তাঁদের পরিবারবর্গই নয়, বিদেশি অতিথিরা এলে তাঁদের নিরাপত্তা দেওয়ার ক্ষেত্রে এসএসএফের একটা বিরাট ভূমিকা থাকে। আর এটা একটা কঠিন দায়িত্ব।’ সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালনের জন্য এ সময় তিনি এসএসএফ সদস্যদের ধন্যবাদ জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের মুজিব বর্ষ এবং স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উদ্যাপনের সফলতার পেছনেও এই এসএসএফ সদস্যদের অনেক অবদান রয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘একদিকে যখন করোনা, অন্যদিকে ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, ভুটানের মতো প্রতিবেশী দেশগুলোর রাষ্ট্র ও সরকারপ্রধানকে প্রটোকল এবং নিরাপত্তা দেওয়া চ্যালেঞ্জিং ছিল। যাতে তারা (এসএসএফ) সফল হয়েছে।’ এ সময় তাঁর দল আওয়ামী লীগ, সশস্ত্র বাহিনী এবং সংশ্লিষ্ট সবার অবদানের কথাও তিনি স্মরণ করে বলেন, ‘সকলের সহযোগিতার জন্যই এটা আমরা করতে পেরেছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ’৯৬ সালে যখন তিনি প্রথম সরকার গঠন করেন, তখন থেকেই দেখেছেন, এসএসএফ সদস্যরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে তাঁদের দায়িত্ব পালন করেন। যদিও দায়িত্ব পালনকালে তাঁদের নানাবিধ সমস্যা ছিল। তিনি বলেন, যেহেতু বিভিন্ন বাহিনী থেকে এখানে সদস্যরা আসেন, তাঁদের যেমন আবাসন সমস্যা ছিল, তেমনি প্রশিক্ষণের, এমনকি ফায়ারিংয়ের জন্য আলাদা কোনো জায়গা ছিল না। যার সমাধান তাঁর সরকার করেছে।
‘সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশ আরও সবুজ হোক’
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল সকালে তাঁর সরকারি বাসভবন গণভবনে কৃষক লীগ আয়োজিত সারা দেশে বৃক্ষরোপণ অভিযান উদ্বোধন করেন। এ সময় তিনি বলেন, তাঁর সরকার পরিবেশ এবং প্রতিবেশ উন্নত করে সুন্দর দেশ গঠনে দেশকে সবুজে আচ্ছাদিত করে ফেলতে কাজ করে যাচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের সবুজ-শ্যামল বাংলাদেশ আরও সবুজ হোক, আরও সুন্দর হোক এবং এর পরিবেশটা যেন ঠিক থাকে। এই বাংলাদেশের পরিবেশ এবং প্রতিবেশ ঠিক রেখে এর সার্বিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন আমরা করতে চাই। সেই উন্নয়নের জন্যই আমাদের এই পদক্ষেপ।’
অনুষ্ঠানে কৃষক লীগ সভাপতি সমীর চন্দ্র এবং সাধারণ সম্পাদক উম্মে কুলসুম অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।