28.9 C
Bangladesh
Thursday, 19, June 2025
spot_img

সিন্ডিকেটে জিম্মি ঝিনাইদহ বিদ্যুৎ বিভাগ

নিজস্ব প্রতিবেদক :

সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে ঝিনাইদহের ওয়েস্টজোন পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের (ওজোপাডিকো) গ্রাহকরা। গ্রাহকদের অভিযোগ, ঘুষ দিলে অতি সহজেই মিলছে সেবা, ঘুষ না দিলেই হচ্ছেন হয়রানির শিকার, পোহাতে হচ্ছে ভোগান্তি।

 

ঝিনাইদহ ওজোপাডিকো এখন শক্তিশালী দালাল সিন্ডিকেটের কাছে জিম্মি। ওজোপাডিকো, ঝিনাইদহ এর নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী , সহকারী প্রকৌশলী মো: জাকির হোসেন ও উপ—সহকারী প্রকৌশলী উত্তম কুমার এর তত্বাবধানে এই দালাল চক্র পরিচালিত হয়ে আসছে। এই দালাল চক্রের মাধ্যম ছাড়া কোন কাজ হয়না ঝিনাইদহ ওজোপাডিকো অফিসে।  গ্রাহকদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম চৌধুরীর গড়ে তোলা এই সিন্ডিকেটের প্রধান মোঃ ইমদাদুল হক বাবু। দালাল সিন্ডিকেট প্রধান ইমদাদুল হক বাবু কখনো ঝিনাইদহ সদর উপজেলা কৃষকলীগের সহ—সভাপতি, কখনো ঝিনাইদহ ওজোপাডিকোর কম্পিউটর অপারেটর হিসাবে বিভিন্ন জায়গায় পরিচয় দেন। ঝিনাইদহের ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী, সহকারি প্রকৌশলী সহ বিভিন্ন কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা প্রতি মাসে গ্রাহকদের কাছ থেকে লক্ষ লক্ষ টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন এই সিন্ডকেটের মাধ্যমে।
ঝিনাইদহ শহরে বসবাসরত মানবাধিকার কর্মী সোনিয়া খান তুলি জানান, আমার বাসার মিটারে ওয়াট কম থাকার কারনে, বিদ্যুৎ অফিসে গেছিলাম সমাধানের জন্য, কিন্তু ঝিনাইদহ ওজোপাডিকোর উপ—সহকারী প্রকৌশলী উত্তম কুমার নন্দী
আমার সাথে অসাদাচরণ করেন। আমি বিষয়টি নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম চৌধুরীকে জানালে তিনি বলেন ট্রান্সফরমারে শক্তি নেই, টাকা লাগবে ওয়াট লোড বাড়াতে। এরপর টাকা প্রদানের রশিদ চাইলে, নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন এসব দেয়া যাবেনা। এ বিষয়ে প্রতিবাদ করায় বিদ্যুৎ অফিসের লোকজন আমাকে অনেকবার বিড়ম্বনায় ফেলেছেন। এছাড়াও বৈদ্যুতিক খুটি থেকে মিটারের সংযোগ তার  ৮—১০ বার লুজ করে রেখে গেছে। এ বিষয়ে কয়েকদিন অভিযোগ
দেওয়ার পরে আমার মিটারের তার সংযোগ ঠিক করে দিয়েছে। শহরের আরেকজন বাসিন্দা মো: সাইদুল ইসলাম টিটোন বলেন, জরুরি বিদ্যুৎ সেবার জন্য অফিসে কল দিলেই অপর প্রান্ত থেকে বলতে শোনা যায় এখন গাড়ি নেই, গাড়ি কখন আসবে বলতে পারছিনা। কিন্তু দালালদের ফোন দিলে ৩০০—৪০০ টাকার বিনিময়ে সাথে সাথেই বিদ্যুৎ অফিসের লাইনম্যান গাড়ি নিয়ে হাজির হয় । শহরে  আসিফ অপটিকাল এর মালিক ফরিদুর রহমান জানান আগস্ট মাসে বিল পরিশোধ করলেও সেপ্টেম্বর মাসের সাথে আগস্টের বিল আসছে। বিদ্যুৎ অফিসে যোগাযোগ করলেও বিদ্যুৎ অফিস থেকে দুই মাসের বিলই পরিশোধ করতে বলেছে। ফরিদুর রহমান বলেন বিদ্যুৎ অফিস মানেই হয়রানী আর নৈরাজ্য। দোকান ব্যবসা বন্ধ রেখে রোজ রোজ বিদ্যুৎ অফিসে যাওয়াই  চরম ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। তথ্যানুসন্ধধানে আরও জানা যায়, দালাল সিন্ডিকেটের প্রধান ইমদাদুল হক বাবুর খন্দকার কম্পিউটার এন্ড ফটোকপি নামে একটি দোকান আছে ঝিনাইদহ ওজোপাডিকো অফিসের সামনে ।  সেই দোকান থেকে নতুন মিটার সংযোগের কাজ সহ বিদ্যুৎ অফিসের যাবতীয় কারবার করা হয়।  বাবুর ফেইসবুক প্রফাইলে দেখা যায় সে সদর উপজেলা কৃষকলীগের নেতা হিসেবে শুভেচ্ছা ব্যানার পোস্ট করেছে। আবার ওজোপাডিকোর কম্পিউটার অপারেটর হিসেবে ঈদ এর শুভেচছা ব্যানার পোস্টে করেছে। এছাড়াও সে ওজোপাডিকো, ঝিনাইদহ অফিসে সাবস্টেশনের  মেরামত কাজে নিজের ছবি ও বিভিন্ন কর্মকর্তাদের সাথে ছবি তুলে পোস্ট করেছেন। এতে বোঝার উপায় নেই বাবু ওজোপাডিকোর কোনো স্টাফ নন। এছাড়া বাবুর এই দালাল চক্রের অন্যতম সদস্য হলো ভুটিয়ারগাতি গ্রামের রকি, কাঞ্চনপুরের মিজান ড্রাইভার, খাজুরার বাসিন্দা মিজা ইলেকট্রিশিয়ান,  মিটার সেকশনের আসিফ, পবহাটি গ্রামের রিপন ও ড্রাইভার লোকমান। এদিকে ওজোপাডিকোর গাড়ির ড্রাইভার লোকমান ও রাশেদ দৈনিক মজুরী ভিত্তিতে নিয়োগপ্রাপ্ত হলেও বাড়তি উৎকোচের আশায় তারা  দুজনই গাড়ি চালানোর জন্য অন্যলোক রেখে দালাল সিন্ডিকেটের সাথে মিলেমিশে অন্যকাজে ব্যস্ত থাকেন। এ বিষয়ে ইমদাদুল হক বাবুর কাছে জানতে চাওয়া হলে, তিনি জানান, আমি ঝিনাইদহ ওজোপাডিকোর নিয়োগপ্রাপ্ত কোন ব্যক্তি না। নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম আমাকে কাজে নিয়েছেন। কিন্তু আমাকে কোন নিয়োগপত্র দেননি। প্রতি মাসে ১২ হাজার টাকা বেতন পাই। এর বাইরে অন্য কোন অনিয়মের সাথে আমি জড়িত না। ওজোপাডিকোর কয়েকজন কর্মচারী (নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক) জানান,  ওজোপাডিকোর দালাল চক্রের নিয়ন্ত্রণ কর্তা সহকারী প্রকৌশলী মো: জাকির হোসেন। তার তত্বাবধানে থেকেই দালাল চক্র দীর্ঘদিন যাবত ওজোপাডিকো অফিসে কাজ করে এসেছে। দালাল চক্রের সমস্ত টাকা—পয়সা ভাগ করে দেন এই সহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন। এই বিষয়ে ঝিনাইদহের ওজোপাডিকোর নির্বাহী প্রকৌশলী জাকির হোসেন জানান, ইমদাদুল হক বাবু  সহ অন্যান্যরা আমাদের অফিসের নিয়োগ প্রাপ্ত ব্যক্তি নয়। যেহেতু আমাদের লোকবল সঙ্কট, অনেক গ্রাহকদের সেবা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে তাদেরকে কাজে নেওয়া হয়েছে।  এছাড়া মানবাধিকার কর্মী সোনিয়া খান তুলির অভিযোগের বিষয়ে আরেক নির্বাহী প্রকৌশলী উত্তম কুমার জানান, আমার বিরদ্ধে সোনিয়া খান তুলি যে অভিযোগ করেছে তা সত্য নয়। তার যদি কোন অভিযোগ থাকে তাহলে আমার উর্দ্ধতন কমর্কতা বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন। সেটা তদন্ত হোক।  তথ্যানুসন্ধানে আরও জানা যায়, নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম চৌধুরী এই দালাল চক্রের মাধ্যমে ওজোপাডিকো অফিসে একটা লুটপাটের রাজত্ব তৈরী করে রেখেছেন। ওজোপাডিকো অফিসে কোন অনিয়মের খবর যেন বাহিরে না যায়, সে কারনে দালাল সিন্ডিকেট এর সাহায্যে বিভিন্ন সময় সাংবাদিকদের আটকে রেখে লাঞ্চিত করা, সাংবাদিকদের নামে মামলাসহ ক্ষমতা প্রদর্শন করেছেন, যেন কোন সাংবাদিক ওজোপাডিকো অফিসে না আসে। এসমস্ত বিষয়ে নির্বাহী প্রকৌশলী রাশেদুল ইসলাম চৌধুরীর কাছে জানতে চেয়ে বারবার ফোন করা হলেও, তিনি ফোন রিসিভ করেন নি।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles