28.9 C
Bangladesh
Thursday, 19, June 2025
spot_img

হরিণাকুন্ডুতে ইটভাটা মালিক সমিতির তদবিরে চলছে অবৈধ ইট ভাটা

ঝিনাইদহ প্রতিনিধি:

ঝিনাইদহের হরিণাকুন্ডু উপজেলায় জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির তদবিরে চলছে অবৈধ ইট ভাটা। ইটভাটা গুলো অবৈধ হওয়ার পরও কিভাবে চলছে তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জেলা সচেতন মহলের মাঝে। জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের কোন পদক্ষেপ না নেওয়ায় তাদের দিকেও প্রশ্ন উঠছে।

জানা যায়, হরিণাকুন্ডু উপজেলায় মোট ১৮ টি ইটভাটা রয়েছে। যার মধ্যে ৮ নং চাঁদপুর ইউনিয়নে ১ কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে গড়ে উঠেছে ৫টি অবৈধ ইটভাটা। সড়কের পাশে ফসলী জমি ঘেঁষে হরিণাকুন্ডু উপজেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হান্নান আলী খাঁর এমএসবি ব্রিকস, বাবুল হোসেন খানের আরএসবি ব্রিকস, আলমগীর হোসেনের আনিশা এন্ড তানিশা বিক্রস, শিতেলী পাড়া হাকিমপুর এলাকায় মিলন এন্ড জান্নাত ব্রিকস, পারমথুরাপুর এলাকায় এ.জে.বি ব্রিকস নামে ইটভাটা রয়েছে। যেগুলোর অধিকাংশরই নেই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রসহ জেলা প্রশাসনের লাইসেন্স। তবুও অবৈধ ইট ভাটার ব্যবসা চলছে রমরমা।

সরজমিনে এম.এস.বি ইটভাটা ঘুরে দেখা যায়, আম, জাম, রেইনট্রি, কদম, কাঁঠাল, খেঁজুর, নারকেলসহ সবুজ বনায়ন ধ্বংস করে শত শত মন বিভিন্ন ফলজ ও বনজ গাছের কাঠ মজুদ করা হয়েছে। কয়লার পরিবর্তে পোড়ানো হচ্ছে বাঁশের মোথা ও খেজুর গাছসহ অন্যান্য জ্বালানি কাঠ। ফলে চুল্লি থেকে অনবরত বের হচ্ছে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া। এছাড়াও ফসলি জমির টপসয়েল কেটে স্তুপ করা হয়েছে।

স্থানীয় কৃষক ও একাধিক বাসিন্দারা জানান, ক্ষেতের পাশে ইট ভাটা গড়ে ওঠায় ধুলোবালিতে ফসলি জমির ক্ষতি হচ্ছে। ফসলের উৎপাদন কমে যাচ্ছে। এছাড়াও ইটভাটার নিজস্ব মাটিভর্তি ট্রাক্টর চলাচলের কারণে সরকারের কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত রাস্তাগুলো ভেঙে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। সামান্য বৃষ্টিতে রাস্তা কর্দমাক্ত হয়ে প্রায়ই ঘটছে নানান দুর্ঘটনা।

এম.এস.বি ইটভাটার পাশে বসবাসরত আব্দুর রাজ্জাক জানান, এই ইটভাটায় দিন-রাত চব্বিশ ঘণ্টা গাছের কাঠ পোড়ানো হচ্ছে। যার কালো ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হচ্ছে চারপাশ। তিনি আরও বলেন, আমার বৃদ্ধ মা শ্বাসকষ্টে ভুগতে শুরু করেছে।

আক্কাস আলী নামের আরেক বাসিন্দা বলেন, ইটভাটার ধুলোবালিতে ঘরবাড়িতে বসবাস করা কঠিন হয়ে পড়ছে। তিনি এই সকল অবৈধ ইটভাটা উচ্ছেদ করার দাবি জানান।
জানা যায়, বছরে দুই-একবার পরিবেশ অধিদপ্তর নামমাত্র অভিযান চালিয়ে সামান্য কিছু জরিমানা করলেও সেগুলো পরবর্তীতে আবার চালু হয়ে যায়। আর হরিণাকুন্ডুতে যতগুলো অবৈধ ইটভাটা রয়েছে সবগুলোই বিভিন্ন ভাবে তদবির করে অনৈতিক উপায়ে পরিচালনা করছে অবৈধ ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হান্নান আলী খাঁ।

ইটভাটায় কাঠ পোড়ানো এবং পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের বিষয়ে কথা হয় হরিণাকুন্ডু ইটভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক হান্নান আলী খাঁর বলেন, শুধু ঝিনাইদহে না সারা দেশেই অবৈধ উপায়ে ইটভাটা পরিচালিত হচ্ছে। আপনারা পারলে ইটভাটা বন্ধ করে দেন। স্থানীয় সংসদ সদস্যের সাথে সুসম্পর্ক থাকায় ওই ভাটায় অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হচ্ছেনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমি এই বিষয়ে ফোনে কোনো বক্তব্য দিতে পারবো না।

অবৈধ ইটভাটা পরিচালনার বিষয়ে ঝিনাইদহ পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মুন্তাছির রহমান জানান, হরিণাকুন্ডু উপজেলায় এ পর্যন্ত মোট ৮টি ভাটায় ২১ লাখ টাকা জরিমানা করেছি এবং অভিযান অব্যাহত থাকবে। তিনি আরও বলেন, হরিণাকুন্ডু উপজেলায় মোট ১৮টি ইট ভাটা রয়েছে যাদের কারোরই পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। মূলত আমাদের ম্যাজিষ্ট্রেট চেয়ে অভিযান পরিচালিত করতে হয় যে কারণে কিছুটা সময় লাগে। তবে পর্যায়ক্রমে সকল অবৈধ ইটভাটায় অভিযান পরিচালনা করা হবে।

Related Articles

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Stay Connected

0FansLike
0FollowersFollow
0SubscribersSubscribe
- Advertisement -spot_img

Latest Articles